কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর পাট্টা দেওয়া জমি বিক্রি করল দুষ্কৃতীরা

আশিস মণ্ডল, রামপুরহাট, ৩ নভেম্বর: স্বামীর বন্ধুর কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাট্টা দেওয়া খাস জমি অন্যজনকে বিক্রি করে দিল দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনার সঙ্গে শাসক দলের পঞ্চায়েত প্রধানের মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের ভয়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার হরিদাসমাটি বৈরগাছি কলোনি গ্রামে।

জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগে বীরভূমে নলহাটি থানার শীতলগ্রামের বাসিন্দা রীনা পালের বিয়ে হয় বহরমপুরের বৈরগাছি কলোনিতে। তাদের দুই মেয়ে। স্বামী পিন্টু পাল পেশায় টোটো চালক। বিয়ের আগে বন্ধু অসীম দাসকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ে দেখতে যান পিন্টু। বিয়ের পর থেকেই রীনাকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে অসীম। এনিয়ে বাড়াবাড়ি হলে অসীমের নামে বহরমপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সে সময় পুলিশ অসীমকে গ্রেফতার করে। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে রীনার প্রতি তার আক্রোশ কয়েকগুণ বেড়ে যায় বলে অভিযোগ। এদিকে আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে খাস জমি পাট্টা দেওয়ার আবেদন জানান পিন্টু। ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেই জমির পাট্টা দেওয়া হয় পিন্টুবাবুকে। কিন্তু পিন্টুর বন্ধু অসীম সেই জমি বিকাশ মজুমদারকে নকল দলিল করে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ। এনিয়ে বিবাদের মধ্যেই চলতি বছরের ৫ আগস্ট বাড়িতে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারধর করা হয় রীনা পাল ও তার স্বামীকে।

রীনা পাল বলেন, “ওই দিন ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় কোপ মারার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। আমি হাত দিয়ে বাঁচাতে গেলে ডান হাতে কোপ পড়ে। বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাতে
১৭টি সেলাই লাগে। পরের দিন রাজ কুমার ঘোষ, প্রহ্লাদ ঘোষ, সিদ্ধার্থ ঘোষ, মিঠুন ঘোষ ও মিতালী ঘোষদের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়িতে খুনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে অভিযুক্তরা। বহরমপুর থানার এক মহিলা পুলিশ অফিসার অভিযুক্তদের ধরতে গড়িমসি করছেন”। রীনা পালের দাবি, অসীমের কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে তাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। তাদের জমিতে থাকা গাছ কেটে ফেলে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলছে। প্রাণের ভয়ে ছোট মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ওই গৃহবধূ। ঘটনার কথা জানানো হয়েছে তৃণমূলের নলহাটি ২ নম্বর ব্লক সভাপতি বিভাস চন্দ্র অধিকারীকে।

বিভাসবাবু বিষয়টি দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের নজরে এনেছেন। বিভাসবাবু বলেন, “এক বছর ধরে ওই গৃহবধূ আমাদের কাছে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পাট্টা দেওয়া জমি কিছু দুষ্কৃতী বিক্রি করে দিয়েছে। ওই পরিবারের উপর মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করা হচ্ছে। আমি দলের অনুমতি নিয়ে বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। কারন এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে”।

মুর্শিদাবাদের হরিদাসমাটি অঞ্চলের প্রধান রাজা দাস বলেন, “জমি কেনাবেচার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত নয়। কাগজপত্র যার থাকবে জায়গা তার হবে। কেউ জোর করে জমি দখল করলে আমরা মেনে নেব না। আমি বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *