বিএসএফ নিয়ে মমতাকে কড়া চিঠি ধনকরের

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ৯ ডিসেম্বর: বিএসএফ সম্পর্কে মন্তব্য নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।

বৃহস্পতিবার টুইটে এ কথা জানিয়ে ধনকর লেখেন,
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ‘বিএসএফ-কে ১৫ কিলোমিটারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাও পুলিশের অনুমতি নিয়ে।’ এই কথা আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই অবস্থান সার্বভৌম রাজনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য উদ্বেগজনক। অবিলম্বে বিএসএফ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।“

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠি রাজ্যপাল টুইটে যুক্ত করে দিয়েছেন। তাতে লেখা হয়েছে, “বিএসএফ-এর বিষয়ে আপনার ‘নির্দেশে’ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ৭.১২.২০২১ তারিখে গঙ্গারামপুরে সরকারী প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন আপনি বলেছেন যে, বিএসএফ-কে ১৫ কিলোমিটারের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাও রাজ্যের কাছে পুলিশের অনুমতি নিয়ে। এগুলি আইন বা রাজ্যে বিএসএফ-এর এক্তিয়ার ১৫ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটার বাড়ানো নিয়ে সাম্প্রতিক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আপনার অবস্থান বিরক্তিকর সংকেত পাঠিয়েছে। এটি ফেডারেল রাজনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য বিপদজনক।

বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের সাথে আন্তর্জাতিক সীমানা থাকা এই রাজ্যে, বিএসএফ এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী জাতীয় নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে এবং অপরাধমূলক বেআইনি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ-সহ উল্লেখযোগ্যভাবে নির্দিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দ্বন্দ্ব নয়, সুস্পষ্টভাবে দ্বৈরথ সৃষ্টি করার প্রয়োজন; বিএসএফ ও রাজ্যের নিরাপত্তাব্যবস্থা মধ্যে যুদ্ধ না, সহযোগিতা দরকার।

এটি নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সমীচীন যে রাজ্যের আইন ও শৃঙ্খলা সংস্থা এবং কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করবে। সামগ্রিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত এবং সমন্বয়মূলক পদ্ধতিতে তারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।

পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এই যথাযথ সংবেদনশীলতার দিকে নজর দেওয়া দরকার, যেগুলিকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।

আপনার নির্দেশাবলী এবং রাজ্যে বিএসএফ-এর কার্যকারিতা সম্পর্কিত অবস্থান পুনর্বিবেচনা করা দরকার যাতে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা যায়। জনসাধারণের এবং জাতীয় স্বার্থে এটি অপরিহার্য।

সমস্যাটির সমালোচনামূলক এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটা প্রেক্ষিত রয়েছে। আমি নিশ্চিত যথাযথ পদক্ষেপগুলি, যেমন বলা হয়েছে, আপনার তরফে জরুরিভাবে নেওয়া হবে।“

প্রসঙ্গত, বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার নিয়ে ফের সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সম্পর্কে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার এই সতর্কবার্তা দেন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি নাগাল্যান্ডে সেনাদের গুলিতে ১৫ জনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদও জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার শুভেন্দুবাবু টুইটারে লিখেছেন, “তিনি বারবার অপরাধ করছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বিএসএফ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। অনুগ্রহ করে প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করুন এটিকে বিবেচনা করার জন্য। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর অনুগ্রহ করে বিষয়টি রাষ্ট্রপতি ভবনকে জানান।“

অপর টুইটে শুভেন্দুবাবু লিখেছেন, “আমি আশ্চর্য হচ্ছি যে, একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, ভারতের সংবিধানের প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাস এবং আনুগত্য রাখতে এবং ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতাকে সমুন্নত রাখার কথায় যিনি শপথ নিয়েছেন, বারবার বিএসএফ-কে অপদস্ত করতে পারে। বিএসএফ ঠিক সেটাই করে যার জন্য তাঁদের নিযুক্ত করা হয়েছে।“

মঙ্গলবার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে রাজ্যের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের, বিএসএফের নয়। তাদের দায়িত্ব সীমান্ত রক্ষা করা। কিন্তু বিএসএফ এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এখন সীমান্ত এলাকায় গ্রামগুলোর ভেতর ঢুকে পড়ছে। সীমান্তের ১৫ কিলোমিটার এলাকায় টহল দেওয়ার কথা থাকলেও বিএসএফ এখন তা মানছে না। আমাদের সীমান্তবর্তী জেলা মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষ এবং প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, বিএসএফ তাদের এখতিয়ার লঙ্ঘন করে ঢুকে পড়ছে আমাদের সীমান্ত এলাকায়। অত্যাচার চালাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে আরও সতর্ক হতে হবে।’’ ওই বক্তৃতার ভিডিও টুইটারে যুক্ত করেছেন শুভেন্দুবাবু।

সাম্প্রতিক নির্দেশিকার জেরে পশ্চিমবঙ্গে বিএসএফ-এর এক্তিয়ার ১৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৫০ কিলোমিটার হয়েছে। তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে পঞ্জাব, বাংলার মতো অবিজেপি শাসিত রাজ্য। এ বার সেই প্রসঙ্গেই কেন্দ্রের পক্ষ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। আগেও বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্ক চরমে উঠেছে। ফের নবান্নের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে রাজভবন। বিএসএফ-বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজ্যপালের চিঠি তাতে ঘৃতাহুতি বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *