আবেদন করেও জোটেনি অনুমোদন, গলসী-১ নং ব্লকের চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতে মুখ থুবড়ে উন্নয়ন

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৫ মার্চ: বেহাল রাস্তা। জোটেনি এমজিএনআরজিএস প্রকল্পে কংক্রিট করার অনুমোদন। বেহাল দশায় সরকারি অতিথিশালা। দামোদর নদে জলাধারকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরী বিশ বাঁও জলে। অভিযোগ, প্রস্তাব পাঠানোর পরও অনুমোদন জোটেনি। আর তাতেই মুখ থুবড়ে পড়েছে, গলসী-১ নং ব্লকের চাকতেঁতুল পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়ন। ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীর।

উল্লেখ্য, ১৯২৭ সালে দামোদর নদের ওপর রনডিহা জলাধারটি তৈরী হয়। আশপাশের রনডিহা, চাঁকতেতুল, বনগ্রাম, ফতেপুর, গোমহল প্রভৃতি এলাকার চাষের সুবিধার্থে জলাধারটি তৈরী হয়। দামোদরে  জলাধারের উত্তর প্রান্তে রয়েছে রনডিহা ও অপর প্রান্তে রয়েছে বাঁকুড়া জেলা। জলাধারের জলে নির্ভরশীল প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর কৃষিজমি। বেহাল রাস্তা ও সৌন্দযায়নের অভাবে ওই জলাধারে পিকনিকের মরশুমে পর্যটকরা মুখ ফিরিয়েছে। গত ২০১৭ সালে দিঘার আদলে রনডিহা জলাধারকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা করেছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতি। জলাধার সংলগ্ন সেচদফতরের প্রায় ২০০ একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সেচ দফতরের বাংলো ও অফিস। জলাধার এলাকার প্রকৃতির মনোরম পরিবেশই হাতছানি দেয়। রয়েছে সরকারি অতিথিশালা।

জানা গেছে, দামোদর নদের পাড়ে পর্যটনকেন্দ্রটি সাজাতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। সেইমতো প্রজেক্ট রিপোর্ট তৈরী হয়। প্রজেক্ট রিপোর্ট অনুযায়ী জলাধার সংলগ্ন শিশু উদ্যান, কটেজ, বোটিং ও প্যারাগ্লাইডিংয়ের ব্যাবস্থা করা, আধুনিক মানের পরিকাঠামো উন্নয়ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এবং প্রায় ১১ একর জমির ওপর সবুজায়ন ও উদ্যান প্রথম পর্যায়ে করার উল্লেখ ছিল। এছাড়াও জলাধারের পাশে ছোট পুকুর রয়েছে সেখানে রঙ্গিন মাছ চাষের ব্যাবস্থা করার পাশাপাশি ছোটো ছোটো কটেজ, কৃত্রিম ঝর্ণা তৈরী করে সৌন্দর্যায়ন করাও ছিল প্রকল্পে। যদিও সেসব এখন বিশ বাঁও জলে। লাল ফিতের ফাঁসে আটকে রনডিহা জলাধারকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্রের কাজ। এমনকি চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় এমজিএনআরইজিএস প্রকল্পের ২৭ টি রাস্তার কাজ বিশ বাঁও জলে। যার মধ্যে রনডিহায় ৫ টি রাস্তার কাজ, ভরতপুরে ৮টি, চাকতেঁতুল গ্রামে ৬টি, শালডাঙা গ্রামে ৩টি সহ বেশ কয়েকটি রাস্তা রয়েছে ওই প্রকল্পের অনুমোদনের অপেক্ষায়।

উল্লেখ্য, গত অর্থ বছরে পূর্ব বর্ধমান জেলার সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী সার্বিক উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই পিছনের সারিতে ছিল চাকতেঁতুল পঞ্চায়েত। বিশেষ করে এনআরইজিএস কাজ, আবাস যোজনার গৃহ নির্মাণে ঢিলেমিতে অনেকাংশে পিছনে ছিল। তাতে বিস্তর প্রশ্ন ওঠে।

চাকতেঁতুল পঞ্চায়েত প্রধান অশোক ভট্টাচার্য জানান, “গত ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর এমজিএনআরইজিএস প্রকল্পে ২৭ টি রাস্তা কংক্রিটের তৈরীর জন্য ৩ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার ডিপিআর বিডিওকে মেইল করা হয়েছিল। পরে ২১ ডিসেম্বর জেলায় অনুমোদনের জন্য
বিডিও’র কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনোরকম অনুমোদন আসেনি। জেলায় গোটা বিষয়টি জানানো হয়েছে। গত তিনমাসে ওই নথি জেলায় পৌঁছায়নি। তাতে স্থানীয় বিধায়কের সুপারিশ করা আছে।”

তিনি আরও বলেন, “রনডিহা জলাধারকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র তৈরী হলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। তার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি অতিথিশালা রয়েছে। বছর পাঁচেক আগে ওই অতিথিশালা পঞ্চায়েতের অধীনে থাকায় ঠিক চলছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে পঞ্চায়েত সমিতি হস্তান্তর করে নেওয়ার পর বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেহাল দশায়। সরকারি ওই অতিথীশালা সংস্কার এবং পুনরায় পঞ্চায়েতের অধীনে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করেছিলাম। তারও কিছু উত্তর মেলেনি। ২০১৭ সাল থেকে রনডিহা জলাধার পর্যটন কেন্দ্র তৈরীর জন্য দু’দফায় ২১ কোটি টাকার প্রজেক্ট রিপোর্ট পাঠানো আছে অনুমোদনের জন্য। সেটাও ফাইল বন্দি।”

চাকতেঁতুল পঞ্চায়েত প্রধান অশোক ভট্টাচার্য আরও জানান,”চলতি অর্থ বছরে এক’শ দিনের কাজে ১ লক্ষ ৯ হাজার শ্রম দিবস হয়েছে। সেই অনুপাতে এনআরইজিএস প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি টাকার কংক্রিটের রাস্তার কাজ পাওনা রয়েছে। তারপরও কেন অনুমোদন মিলছে না, গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।” এলাকায় অনুন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে চাকতেঁতুল পঞ্চায়েতের শালডাঙা গ্রামবাসী আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন বয়কটের ডাক দিয়েছে। উল্লেখ্য, চাকতেঁতুল পঞ্চায়েত তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বোর্ড গঠন করেছে। এখন প্রশ্ন, এই অচলাবস্তার কারণ কি? গোষ্ঠীকোন্দলে কি থমকে চাকতেঁতুলের উন্নয়ন?

যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের গলসী-১ নং ব্লক সভাপতি জনার্দ্দন চট্টোপাধ্যায় জানান,” উন্নয়নের বিষয়টি বিডিওকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে সেখানের পঞ্চায়েত প্রধান মহকুমাশাসক ও জেলাশাসকের কাছে জানাতে পারে। এবং দলের জেলা নেতৃত্বকে জানাতে পারে।”

যদিও এবিষয়ে গলসীর বিধায়ক নেপাল ঘোরুই বলেন,” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয় নয়। সমস্যা রয়েছে। খুব শীঘ্রই সমস্যা সমাধান হবে। এবং খুব শীঘ্রই ওই পাঞ্চায়েতে রাস্তার কাজ শুরু হবে।” 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *