Devdutta Majee, Singha Bahini, বিধর্মীদের বয়কটের ডাক দেবদত্ত মাজির, গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের ৭৯ তম বার্ষিকীতে বড় সমাবেশ সিংহ বাহিনীর

আমাদের ভারত, ১৭ আগস্ট: ১৬ আগস্ট দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস- এর ৭৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় দেবদত্ত মাজির নেতৃত্বাধীন সিংহ বাহিনী সংগঠনের। স্মরণ করা হয় গোপাল মুখোপাধ্যায়কে, যিনি গোপাল পাঁঠা নামে অধিক পরিচিত। আজ অনেকেই মনে করেন তিনি কলকাতা শহরের বুকে হিন্দুদের নিরাপদ ঠিকানা তৈরীর কারিগর। এদিনের সমাবেশ থেকে বিধর্মীদের বয়কট করার ডাক দেন দেবদত্ত মাজি।

সমাবেশের মঞ্চ থেকে ১৯৪৬ সালের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরে বিধর্মীদের বয়কট করার ডাক দেন দেবদত্তবাবু। তিনি বলেন, কলকাতা, নোয়াখালি, রাওয়ালপিন্ডির মতো একাধিক জায়গায় বিধর্মীরা হিন্দুদের গণহত্যা ঘটিয়েছে। সেই দিন যাতে আর না আসে, তাই হিন্দুদের এক হতে হবে। মূলত অর্থনৈতিক ভাবে হিন্দুদের স্বনির্ভর করার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যা কিছু কিনব সেটা হিন্দু ধর্মের দোকানিদের কাছে কিনব। বাড়িতে বা যে কোনো বিষয়ে যদি কাজের লোক রাখার প্রয়োজন হয় তবে হিন্দুদের রাখুন। হিন্দুদের ঐক্য প্রদর্শনে মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান দেবদত্তবাবু।

কী হয়েছিল ১৯৪৬- এর ১৬ আগস্ট?
১৬ আগস্ট দিনটি ভারতের ইতিহাসে একটি অন্ধকারময় অধ্যায়। আজও গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের বার্ষিকী পালিত হয় সেদিন। ১৯৪৬ সালের এই দিনে কলকাতা ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখেছিল। লাগাতার চার দিন ধরে চলেছিল দাঙ্গা।সাম্প্রদায়িক হিংসায় দশ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। এই ঘটনাকে অনেক ঐতিহাসিক বাংলা ভাগের দাঙ্গার সূচনা বলে অভিহিত করেছেন।

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ভোরে পাকিস্তান তৈরির জন্য মুসলিম লীগ প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়েছিল। কলকাতা শহরজুড়ে শুরু হয় হিন্দু গণহত্যা। তখন দিল্লিতে অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সরকার। আর অখন্ড বাংলা শাসনের দায়িত্ব পেয়েছে লমুসলিম লীগ ও তার নেতা সুরাবর্দি। সুরাবর্দির নির্দেশই কলকাতায় শুরু হয় এই হিন্দু গণহত্যা। বলা হয় কলকাতায় ছিল মহড়া, আর মূল উদ্দেশ্যটি কার্যকর করা হয় নোয়াখালীতে।

মুসলমান দাঙ্গাবাজদের বেশিরভাগ এসেছিল অন্য জায়গা থেকে বলে জানা যায়। অন্যদিকে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার কাজে ভূমিকা নিয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুব, ছাত্র সমাজ ও মধ্যবিত্তরা। ১৯৪৬- এর ১৬ আগস্ট সকালে মুসলিম লীগ যখন অ্যাকশন শুরু করে তখনো পর্যন্ত কলকাতার হিন্দুরা বিষয়টা বুঝে উঠতেই পারেনি।

মুসলিম লীগের নেতৃত্বে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের শুরু হলে রুখে দাঁড়ান গোপাল মুখার্জি ও তার ভারতীয় জাতীয় বাহিনী। মূলত একার হাতেই সেদিন কলকাতাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। প্রবাদ হয়ে গিয়েছে গোপাল ছিলেন বলে টালা ট্যাংক আছে, শিয়ালদা স্টেশন আছে, আপনি ও আমি রয়েছি।

মুসলিম লীগের বাহিনীর হাত থেকে হিন্দুদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতা বউবাজারের ডাকসাইটে এই হিন্দু যুবক কুস্তিগীর গোপাল মুখোপাধ্যায়। তার অন্য পরিচয় তিনি বিপ্লবী অনুকূলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নে। গোপালের সঙ্গে সেদিন যোগ দিয়েছিল যুগল কিশোর ঘোষ, কলকাতায় বসবাসকারী শিখ গোয়ালা সম্প্রদায়ের মানুষ। তাদের সমর্থন করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে পাল্টা মার শুরু হয়। তখন সুরাবর্দি ইংরেজ সরকারকে অনুরোধ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে। অনেকেই মনে করেন কলকাতা শহরের বুকে হিন্দুদের নিরাপদ ঠিকানা তৈরীর কারিগর ছিলেন গোপাল পাঁঠা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *