পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ মার্চ: ২০২৪- এর লোকসভা নির্বাচনে ঘাটাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছে কেশপুরের মহিষদা গ্রামের অধিকারী পরিবারের ছেলে দেব। পরপর দুবার টানা জয়। আবারও প্রার্থী। এইবার জিতলেই টানা তিনবার জিতে হ্যাটট্রিক করবেন অভিনেতা তথা ঘাটালের বিদায়ী সাংসদ মহিষদার ছেলে দেব। ইতিমধ্যেই প্রচার শুরু করে দিয়েছেন দীপক অধিকারী।
ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত কেশপুর বিধানসভা। আর কেশপুর বিধানসভার ১০ নম্বর অঞ্চলের অন্তর্গত মহিষাদা গ্রাম। ২০২৪- এর লোকসভা ভোটের আগে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম দেবের গ্রাম মহিষদাতে। গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাইলাম, কেমন আছে মহিষদা গ্রাম। তবে এই প্রশ্ন করতেই গ্রামের এক গৃহবধূ মামণি মাল আক্ষেপের সুরে বলেন, মহিষদা গ্রামের মানুষ ভালো নেই। যেই জল খেয়ে বেঁচে থাকে মানুষ, সেই জলটুকুও পরিশুদ্ধ নয়। “দেবকে যে ভোটটা দিতে যাব, যদি ভোটের দিন বৃষ্টি হয়, রাস্তা দিয়ে যেতেই পারব না।” তাহলে ভোট দেবো কি করে। দেবের পাড়ার বাসিন্দা ৭০ ঊর্ধ্ব মনমত মাল জানান, গ্রামের ছেলে দেব, তবে গ্রামের জন্য কি করেছে, যে আমরা ওকে ভোট দেবো? গ্রামের মানুষ কেমন আছে দেব নিজে এসে একবার দেখে যাক। তিনি আরও বলেন, দেবের নিজের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটাও খারাপ রয়েছে এখনো। বৃষ্টি হলে হাঁটু সমান কাদা উঠে যায়, সাইকেল নিয়ে যাওয়া যায় না। গ্রামের গৃহবধূ অনুশ্রী মাল বলেন, কল রয়েছে একটা, তবে তাতে জল পড়লেও সে জল খাওয়া যায় না। রাস্তাঘাট খুব একটা ভালো নয়, আমি চাইবো গ্রামের ছেলে গ্রামের উন্নয়নে নজর দিক। মহিষদা গ্রামের বাসিন্দা অমিত দোলই জানান, পাকা রাস্তা থেকে দেবের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটাই তো এখনো ঢালায় হলো না, তাহলে গ্রামের কি করে উন্নয়ন করবে সে। গ্রামের কোনো উন্নয়নই হয়নি, এমনই অভিযোগ অমিত দোলই- এর।
গ্রামের মানুষের এই অভিযোগকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছে বিরোধী দল বিজেপি। কেশপুর বিধানসভার বিজেপি কনভেনার অজয় কৃষ্ণ প্রধান বলেন, এরা নিজেরা চুরি করতেই ব্যস্ত, উন্নয়ন কিভাবে করবে। কেশপুরে কোনো উন্নয়নই হয়নি। বিশেষ করে দেব তার নিজের এলাকার দিকে নজরই দেন না। মহিষদায় বিশালক্ষী মন্দির থেকে দেবের বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা এতোটাই খারাপ, যে মানুষ যাতায়াত করতে পারে না।
তবে সব অভিযোগ উড়িয়ে কেশপুর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি প্রদ্যুৎ পাঁজা জানান, এটা মহিষদা গ্রামের গর্বের বিষয়, তাদের গ্রামের ছেলে সাংসদ হয়েছে। সাংসদের পাশাপাশি তিনি একজন অভিনেতা ও সেলিব্রেটি মানুষ। তার লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা রয়েছে। ৬টি বিধানসভার উন্নয়ন করার পর, কেশপুরের উন্নয়নে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন দীপক অধিকারী। দেবের নিজের গ্রাম মহিষদার জন্য ১০টি ঢালাই রাস্তার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তৃতীয়বার সাংসদ হওয়ার পরেই গ্রামের মানুষ তা উপভোগ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো প্রকল্পর কাজ শুরু হয়ে গেছে, সম্পন্ন হওয়ার পর এই গ্রামের মানুষ বুঝতে পারবেন তাদের জন্য কি করেছে দেব।
তবে দেবের দাদা স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, দেব মানুষের কাজ করতে চান। ওনার মতের সঙ্গে মত মিলিয়ে লোকাল লিডাররা কাজ করতে পারছেন না। আমি একসাথে ছোট থেকে পড়াশোনা করেছি থেকেছি, আমি ওকে খুব ভালো জানি, চিনি। ও মন থেকে খুব ভালো মানুষ। আমি দেবকে বলবো গ্রামের মানুষের কৃষি এবং ছোট ছোট ফার্মিং- এর ব্যবস্থা করে উন্নয়ন করার। দেব এগিয়ে যাক এবং অনেক বড় হোক। পাশাপশি মানুষের কাজ করুক এটাই আমি চাই।