মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, বারাসত, ১ লা জানুয়ারি: সনাতনী সংস্কৃতির পরতে বছরের প্রথম দিনটি কল্পতরু দিবস হিসাবে পালন করছেন তন্বিষ্ট হিন্দুসমাজ। শ্রীরামকৃষ্ণের আশীর্বাদ ধন্য এই দিনটিতে বিভিন্ন মঠ-মিশন-সঙ্ঘ তাদের মতো করে ঐশী আবহে অবগাহন করছেন। এগিয়ে এসেছে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ও। উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাতের সন্নিকটে হৃদয়পুরে রয়েছে ‘প্রণব কন্যা সঙ্ঘ’। স্বামী প্রণবানন্দজীর ভাবাদর্শে পরিচালিত এই মাতৃসঙ্ঘে বসবাস করেন পঞ্চাশাধিক অনাথ ছাত্রী। দেশের মাটির পক্ষ থেকে তাদের নিয়ে হৃদয়পুরে আশ্রম প্রাঙ্গনে এদিন ছিল বনভোজনের অনুষ্ঠান। তাতে যোগদান করেছিলেন সমস্ত ছাত্রী, আশ্রমের সন্ন্যাসিনী, ব্রহ্মচারী ও ভক্তবৃন্দ। বিগত ২৮ শে ডিসেম্বর আশ্রম কর্তৃপক্ষের হাতে বনভোজনের খরচ হিসাবে আর্থিক সহায়তা করে ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর পক্ষে অধ্যাপক ড. কল্যাণ চক্রবর্তী। সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে সেদিনই কথা হয়ে যায়, তারা কল্পতরু দিবসে এই বনভোজনের আয়োজন করবেন।

১ লা জানুয়ারি সকাল থেকেই প্রণব কন্যাদের মধ্যে ছিল দারুণ আনন্দ। তারা নিজেরাই কুটনো কুটে, উনুন জ্বালিয়ে সমস্ত ব্যবস্থা করে ফেলেন। সকালে মন্দিরে যুগাচার্য স্বামী প্রণবানন্দজীর আরতি সুসম্পন্ন হবার পর সুসংবদ্ধভাবে রান্নাবান্নার কাজ শুরু হয়। আশ্রম মাতাজীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেও দেখা যায়। সমস্ত খাবারই নিরামিষ। মেয়েরা তৈরি করেন ফ্রাইডরাইস, স্যালাড, আলুর চপ, আলুর দম, পনিরের তরকারি, পায়েস এবং রসমালাই। ভোজনস্থলের কাছে স্বামী প্রণবানন্দজীর প্রতিকৃতির সামনে সমস্ত ব্যঞ্জন পরিবেশন করে উৎসর্গ করা হয়। এরপর মাতাজীরা ছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে দেশের মাটির সদস্য ও ভক্তবৃন্দকে বিপুল উৎসাহে ভোজন করান। তারপর নিজেরাও গ্রহণ করেন এইসমস্ত সুখাদ্য। দেশের মাটির পক্ষ থেকে প্রতিটি কন্যা ও আশ্রমিকদের একটি করে কলম উপহার দেওয়া হয়।

এই কার্যক্রম কেন গ্রহণ করা হল, সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে দেশের মাটির অন্যতম কার্যকর্তা শ্রী অরিত্র ঘোষ দস্তিদার জানান, পয়লা জানুয়ারি আমরা সবাই সপরিবারে আনন্দে মশগুল হয়ে যাই। কল্পতরু দিবসে পুণ্যলাভের জন্য ছুটে যাই বিভিন্ন মন্দির দেবালয়ে। কিন্তু অনাথ পীড়িত মানুষের কথা আমরা সকলেই ভুলে যাই। ওদেরও যে এই দিনে আনন্দে রাখা যায়, এটা যখন আশ্রমে গিয়ে দেশের মাটির সদস্যরা উপলব্ধি করলেন, বিশেষ করে অধ্যাপক চক্রবর্তী পথ দেখালেন, তখন আমরা বুঝলাম, এতেই আমাদের আনন্দ, এতেই ঈশ্বরকে পাওয়া যাবে। এদিন অধ্যাপিকা মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত থেকে প্রণব কন্যাদের সঙ্গে নিবিড় আত্মীয়তায় আবদ্ধ হন। সংগঠনের আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন শ্রী শুভদীপ চক্রবর্তী, ড: রজত চ্যাটার্জি, এবং শ্রীমতী অন্নপূর্ণা ব্যানার্জি। গানে, মন্ত্রে, আরাধনায় এবং কর্মে দিনটিকে স্মরণীয় করে রেখেছিলেন সকলে।


