আমাদের ভারত, রানাঘাট, ২৭ জুন: সারা দেশ তথা বিশ্বজুড়ে সনাতন ধর্মের জয়গান ধ্বনিত হচ্ছে। আজ পুরীর রথযাত্রার পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে ইস্কন ও অন্যান্য বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হয়েছে রথযাত্রা। জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা – তিন ভাইবোন আজ মাসির বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
সারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ নদিয়া জেলার বীরনগরের জয়পুর গ্রামে রথযাত্রা ও চারাগাছ বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করলো ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’। এদিন সকাল থেকেই গ্রামে ছিল সাজো সাজো রব। গ্রামবাসীরা সবাই মিলে রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
এই রথযাত্রা উপলক্ষে অর্থকরী ও ফলের ৪০০টি চারাগাছ গ্রামবাসীদের মধ্যে বিতরণ করলো দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির। আম, বিলিতি আমড়া, লেবু ও সেগুন গাছ বিতরণ করা হয় সংস্থার পক্ষ থেকে।
ভারতে বনাঞ্চলের পরিমাণ হলো দেশের মোট ভৌগলিক এলাকার ২১.৭২%। অর্থাৎ, প্রায় ৮০.৯ মিলিয়ন হেক্টর এলাকা বনভূমি দ্বারা আচ্ছাদিত। ভারতে, জাতীয় বন নীতি অনুসারে, মোট জমির ৩৩% বনের আওতায় থাকা উচিত, কিন্তু বর্তমানে এটি ২১.৭২% আছে।
আবার পশ্চিমবঙ্গের মোট ভৌগোলিক আয়তনের প্রায় ১৪% এলাকা বনাঞ্চলে আচ্ছাদিত, যা জাতীয় গড়ের থেকে অনেক কম। রাজ্যটিতে প্রায় ১১,৮৭৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বনভূমি হিসাবে নথিভুক্ত। এর মধ্যে, ৪ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত অঞ্চল হিসাবে চিহ্নিত।
এমনই কম বনভূমি আচ্ছাদিত রাজ্যে প্রতিনিয়ত গাছপালা কেটে শহর বৃদ্ধি চলছে। নবনির্মিত শহরের রাস্তাঘাটে গাছ লাগানোর উদ্যোগ যেমন কম তেমন বাঁচানোর উদ্যোগ আরও কম। ‘আগে দিয়ে বেড়া, তারপর ধরো গাছের গোড়া’- এই নীতি মানা হয় খুব কম। তাই গাছ বাঁচাতে বাড়ি বাড়ি চারাগাছ দেবার ব্যবস্থা করল দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির। এই সংস্থা গত কয়েক বছর ধরেই চারাগাছ রোপণ ও গাছ বিতরণের কাজ করে চলেছে।
আজকের এই রথযাত্রা উপলক্ষে চারাগাছ বিতরণ কর্মসূচি সম্পর্কে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দিরের অন্যতম সদস্য মিলন খামারিয়া বলেন, রথযাত্রা আমাদের কাছে সনাতনী হিন্দুর বিভেদ মুছে ঐক্যবদ্ধ হবার যাত্রা। রথের রশির পুণ্য স্পর্শে সব বিভেদ মুছে যাক। পাশাপাশি সুজলা-সুফল হোক আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে ৩৩% বনভূমি থাকার কথা সেখানে মাত্র ১৪% বনভূমি আছে আমাদের রাজ্যে খাতায় কলমে, প্রায় অর্ধেক। তাই গাছ লাগানোতে আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। মানুষকে ফল ও অর্থকরী গাছ দিচ্ছি। ফল খেয়ে নিজেরা ভালো থাকতে পারবে, পাশাপাশি পশু-পাখি যারা ফল খেয়ে বাঁচে তারাও বাঁচতে পারবে। এই রাজ্যের বনভূমিকে বাড়াতে চাই আমরা।
এদিনের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ও কৃষি বিজ্ঞানী ড: কল্যাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির বিভিন্ন ধরনের সেবাকাজ করছে আমাদের ও পার্শ্ববর্তী রাজ্যে। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এমন করেই দেশের ধর্ম, সংস্কৃতি ও বনভূমির নবনির্মাণ করুক তারা।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী সঞ্জয় চক্রবর্তী, অখিল মন্ডল, গুরুদাস বিশ্বাস, রমা রায়, দীপিকা মন্ডল দাস ও আরও অনেকে।