আমাদের ভারত, বারাসাত, ১০ জুলাই: হিন্দুধর্ম অনুসারে মহর্ষি বেদব্যাসকে ‘আদিগুরু’ বলা হয়ে থাকে। আষাঢ় পূর্ণিমা তিথিতেই তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। সেই কারণে এই পূর্ণিমা তিথি গুরুপূর্ণিমা হিসেবে পালিত হয়। গুরুপূর্ণিমাকে ‘ব্যাস পূর্ণিমা’ও বলা হয়ে থাকে। মহর্ষি বেদব্যাস কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন নামেও পরিচিত। বৈদিক জ্ঞানকে তিনিই ঋগবেদ, সামবেদ, যর্জুবেদ ও অথর্ববেদের চারটি খণ্ডে পুঁথিবদ্ধ করেন। মহাভারতের রচয়িতাও তিনি।
আজ গুরু পূর্ণিমা। এই গুরু পূর্ণিমার প্রাক্কালে গতকাল, ৯ জুলাই, হৃদয়পুর ‘প্রণব কন্যা সঙ্ঘ’-এর তৃতীয় সভানেত্রী, পরম পূজনীয়া জ্ঞানানন্দময়ী মাতাজীকে সম্মান জানালো ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-এর সদস্য ও ভক্ত মণ্ডলী।
‘গু’ শব্দে অন্ধকার এবং ‘রু’ শব্দে আলোক বোঝায়। যিনি অজ্ঞান রূপ অন্ধকার নাশ করে জ্ঞানালোক প্রকাশ করে থাকেন, তিনিই গুরু। কাম, ক্রোধ, লোভ, মদ, মোহ ও মাৎসর্য্য – এই ছয় রিপুকে যিনি জয় করেছেন, যিনি আধ্যাত্মিকতার বিমল পথ অবগত করিয়েছেন, যিনি নিষ্কপট ভাবে ইন্দ্রিয় দমন করতে পারেন, যিনি সত্যবাদী, সর্বদা ধর্মের পথে চলেন, যিনি স্থির, মন পবিত্র, যিনি আত্মদর্শন করেছেন; এইরূপ জ্ঞানী, সত্যের প্রতি উৎস্বর্গী ব্যক্তিই গুরু হবার যোগ্য।
যিনি নিষ্কপট ভাবে গুরুকে ভক্তি করেন, গুরু ও ভগবানে ভেদ জ্ঞান করেন না, যিনি নিজের জ্ঞান বুদ্ধি কোন কার্যে প্রয়োগ করেন না, যিনি শূন্য মস্তিষ্কে গুরুর নিকট ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস এর সহিত জ্ঞান লাভ করেন এবং গুরুর আজ্ঞা পালন করেন তাকে শিষ্য বলে।
আমাদের জীবনে গুরুর ভূমিকাকে স্মরণ করা ও তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর দিন হলো গুরুপূর্ণিমা। হিন্দুধর্ম ছাড়া বৌদ্ধধর্ম এবং জৈনধর্মেও গুরুপূর্ণিমার বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। ভারত, নেপাল ও অন্য বৌদ্ধ দেশগুলিতে গুরুপূর্ণিমা পালিত হয়। গুরু আমাদের আত্ম উপলব্ধি করতে সাহায্য করেন। তাই গুরুপূর্ণিমা আসলে নিজেকে চেনার দিন।
এদিন বিকেল পাঁচটায়, প্রণব কন্যা সঙ্ঘের স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজের সভাগৃহে অনুষ্ঠান শুরু হয়। উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন আশ্রমে আগত ভক্ত মণ্ডলী। তারপর মাতাজীকে চন্দন তিলক, মালা ও শাল পরিয়ে বরণ করে নেন ‘দেশের মাটি মাতৃ মিলন মন্দির’-এর সদস্যা শম্পা বিশ্বাস ও সৌমিতা বিশ্বাস কুন্ডু। হাতে তুলে দেওয়া হয় তুলসীগাছ, গীতা ও ড: মনাঞ্জলি বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘তুলসীকথা’ বই। মাতাজীর হাতে ফলের ঝুড়ি তুলে দেন অধ্যাপক ও সমাজসেবী ড: কল্যাণ চক্রবর্তী। মানপত্র পাঠ করেন ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ -এর সদস্য সুশান্ত মজুমদার। মাতাজীর কর্মযজ্ঞ নিয়ে আলোচনা করেন ডা: তরুণ সরকার ও ড: সৈকত মিত্র। সমাজসেবী দিলীপ মন্ডল মাতাজীর জীবনী পাঠ করে শোনান।
পরম পূজনীয় জ্ঞানানন্দময়ী মাতাজী বলেন, পরম পূজনীয় স্বামী প্রণবানন্দ মহারাজ হিন্দু জাগরণের যে কাজ শুরু করেছিলেন তার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছি, আমি নিজের জীবনকে সার্থক মনে করি। ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’-দেশের মানুষের সার্বিক উন্নতি করার চেষ্টা করছে। বৃক্ষরোপণ, বস্ত্র দান, শিক্ষা দান, ধর্ম জাগরণ ইত্যাদি কাজ করছে। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই ও সাফল্য কামনা করি। তাদের দেওয়া সম্মান আমি আন্তরিক শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করলাম।
‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির’ মানুষের জন্য সার্বিক সেবাকাজকে ঈশ্বর-আরাধনা বলে মনে করে। নিরন্তর সাধু-সন্তদের আশীর্বাদ লাভ করেই এই আরাধনা সম্পন্ন করবে ‘দেশের মাটি’ — মন্তব্য করেছেন কল্যাণ মন্দিরের সদস্য ড: কল্যাণ চক্রবর্তী।
দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির -এর সদস্য সুশান্ত মজুমদার বলেন, সারা জীবনব্যাপী ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা পরম পূজনীয় গুরুমহারাজ শ্রীমৎ প্রণবানন্দজী মহারাজের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিবেদিতপ্রাণ ও সারা দেশব্যাপী মাতৃশক্তির জাগরণে আত্মত্যাগী এই মহাপ্রাণা পূজনীয়া সন্ন্যাসিনী ও সমাজসেবিকাকে আমরা এই সম্মাননা জ্ঞাপন করে গর্বিত ও আনন্দিত। পূজনীয়া মাতাজীর সান্নিধ্যে, ওনার মূল্যবান উপদেশ নিয়ে এবং সর্বোপরি ওনার আশীর্বাদে দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির আজ সমৃদ্ধ ও ধন্য হলো। দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির ও হৃদয়পুর প্রণব কন্যা সঙ্ঘের আত্মিক সম্পর্ক দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হলো। প্রণব কন্যা সঙ্ঘের আবাসিক শ্রদ্ধেয়া মাতাজী মণ্ডলীর স্নেহ, ভালবাসায় আমরা আপ্লুত। প্রণব কন্যা সঙ্ঘের আরো আরো সমৃদ্ধি কামনা করি।
সভায় মঙ্গলাচরণ করেন দিলীপ বিশ্বাস, তপন কুমার রায়, পরিতোষ আচার্য ও তুষার ঘোষ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অসীমলাল মুখার্জি। এই অনুষ্ঠানের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সুমন কুমার রায়, রাজদীপ চ্যাটার্জি ও আরও অনেকে। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মিলন খামারিয়া।