স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদীয়া, ৪ জুন:
আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি করছে পঞ্চায়েত সদস্য, এই অভিযোগ তুলে বৃহস্পতিবার নদিয়ার শান্তিপুরের বেলঘড়িয়া ১ পঞ্চায়েতের সামনে বিক্ষোভ দেখালো গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, পঞ্চায়েতের ফুলিয়াপাড়া এলাকার সদস্য স্বপ্না বসাক আসল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নিজের লোকেদের টাকা দিয়েছে। আর তার জেরেই এদিন বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী।
আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া নিয়ে বেলঘরিয়া ওয়ান, বেলঘড়িয়া টু এবং হরিপুর পঞ্চায়েত দুর্নীতি করছে এই অভিযোগে শান্তিপুর জুড়ে পোস্টার পরে। সিপিএমের দাবি, শান্তিপুর ব্লকে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার বেশির ভাগই ক্ষতিগ্রস্তরা পায়নি। সেই টাকা তারা ক্ষতিগ্রস্তদের না দিয়ে নিজেদের একাউন্টে ঢুকিয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা এক টাকাও পায়নি। যাদের ক্ষতি হয়নি তাদের প্রত্যেকের একাউন্টে কুড়ি হাজার টাকা করে ঢুকে গেছে। আমফানের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যে অনুদান এসেছে তা বেলঘড়িয়া ওয়ান, বেলঘড়িয়া টু পুরোটাই আত্মসাৎ করেছে। এই কারণে সাধারণ মানুষকে এখনো পর্যন্ত কোনও তথ্য তারা জানাতে চাইছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের কোনও তালিকাও সামনে আনা হচ্ছে না। এছাড়া হরিপুর পঞ্চায়েতে ও একই অভিযোগে পঞ্চায়েত প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে পোস্টার পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা জগদীশ দাস জানান, যারা সত্যি কারের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা দু টাকাও পায়নি, আর যাদের কোনো ক্ষতি হয়নি তাদের একাউন্টে কুড়ি হাজার টাকা করে ঢুকে গেছে। এখানে পেয়েছে চিরঞ্জিত বসাক, অজিত সরকার, লক্ষণ রাজবংশী। যাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। যাদের ক্ষতি হয়েছে তারা ত্রিপল টানিয়ে থাকতে পারছে না ঘরে। তাদের যদি ৫০ হাজার টাকাও দেওয়া হয় তাহলেও তারা ঘর সারিয়ে উঠতে পারবে না।
এলাকার বাসিন্দা গোপাল দাস জানান, আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে টাকা পৌঁছাচ্ছে না বলে আমি বিক্ষোভ দেখিয়ে ছিলাম। যারা পাওয়ার যোগ্য তারা পায়নি। যাদের ক্ষতি হয়নি তারা পেয়ে গেছে। মেম্বার তার নিজের মনোনীত লোককে টাকা দিয়েছে। এখন সঠিক বিচার চাইছি। না হলে আমাদের বিক্ষোভ চলবে।
স্থানীয় বাসিন্দা যমুনা দাস বলেন, ঝড়ে ঘর ভেঙ্গে গেছে। আমি মেম্বারকে লিস্ট ও দিয়েছি মেম্বার লিস্ট জমা দেয়নি। ক্ষতিপূরণের টাকা পেলাম না। এখানে অজিত সরকার, রাম, লক্ষণ আর চিরঞ্জিত পেয়েছে। ওদের কিছুই হয়নি। যাদের ক্ষতি হয়নি তারাও টাকা পেয়েছে। আজকে বলতে যাওয়ায় ওরা আমাদের ছেলেকে ধরে মেরেছে। আমার মেয়েকেও মেরেছে বিজন।
এ বিষয়ে বেলঘড়িয়া ওয়ান পঞ্চায়েত প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও উপপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন বাইক চালাচ্ছি, এখন কিছু বলতে পারব না বলে ফোন কেটে দেন।
বেলঘড়িয়া টু পঞ্চায়েতের প্রধান জানান, বিরোধীরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
হরিপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শোভা সরকার মন্ডল জানান, আমফানের টাকা এখনো আমার একাউন্টে ঢুকেছে কিনা জানা নেই, তবে সেখান থেকে বলা আছে যে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কিছু করার। আর পোস্টার কারা কীভাবে মেরেছে আমি জানিনা। তাদের সৎ সাহস নেই তাই তারা নামটা উল্লেখ করেনি। আমার মতে তাদের বক্তব্য সরাসরি আমাকে বলতে পারতো। আর এটা যাদের বহুদিন চুরি করে খাবার অভ্যাস, যারা চুরি করে খেয়ে এসছে এতদিন, আমার জন্য এখন তাদের অসুবিধা হচ্ছে। তাদের মধ্যেই কেউ না কেউ করেছে সেটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।