দাবি উঠেছে সম্মানের সঙ্গে রানি শিরোমণি’র স্মৃতিরক্ষার

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৭ মে: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিম মেদিনীপুর সফরের আগেই ফের দাবি উঠেছে সম্মানের সঙ্গে রানি শিরোমণি’র স্মৃতিরক্ষার।

পাঠ্যপুস্তকে রানি শিরোমণি ও কর্ণগড়ের ইতিহাস অধ্যায় হিসেবে স্থান পাক, এই দাবিতে সরব গবেষক ও আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত এবং সাংবাদিক তথা তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। সূত্রের খবর, তা মান্যতা পাবে বলে দলের শীর্ষস্তর থেকে আশ্বাস পাওয়া গিয়েছে।

আগামী ১০ মে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে এসেই তিনি ঘোষণা করতে পারেন কর্ণগড়ের প্রত্নতাত্ত্বিক মর্যাদার কথা। সূত্রের খবর, কর্ণগড় পেতে চলেছে হেরিটেজ জোন হিসেবে মর্যাদা। বিশেষ সূত্রের খবর অনুযায়ী, কর্ণগড়ের এই মর্যাদার জন্য আইন অনুযায়ী জারি হয়েছিল জমি সংক্রান্ত প্রথম ও দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি। তবে কি ১০ মে খাতায়-কলমে মর্যাদা পেতে চলেছে কর্ণগড়?

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ ভারতের প্রথম রাজনৈতিক বন্দিনী রানি শিরোমণি’র এই গড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক ও হেরিটেজ মর্যাদা দেওয়ার জন্য বার বার আবেদন জানিয়েছিল ভালোবাসি কর্ণগড়, হেরিটেজ জার্নি ও রানি শিরোমণি ঐক্য মঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে নজর দিয়েছিলেন এই বিষয়ে। তৎপরতার সঙ্গে বিষয়টি দেখভাল করছিলেন রাজ্যের জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী ড: মানস রঞ্জন ভুঁইঞা এবং রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন।

সম্প্রতি কেন্দ্র বন্ধ করেছে শিরোমণি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সেই জায়গায় এসেছে আদ্রা- হাওড়া এক্সপ্রেস ট্রেন। মানে এই রুটে ভাড়া ৪০ থেকে বেড়ে ১০৫। তবে ট্রেনের বগিতে ‘রানি শিরোমণি’ চোখে পড়ে না। উল্লেখ্য, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন শিরোমণি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয় নিয়েও সরব হতে পারেন তিনি। 

অজিত সিংহের দুই রাণী ছিলেন— রাণী ভবানী ও রাণী শিরোমণি। নিঃসন্তান রাজা অজিত সিংহ অকালে দেহত্যাগ করলে দুই বিধবা রাণী হন জমিদারীর কর্ত্রী। রাণী শিরোমণি নিপুণ বিচক্ষণতার কারণে এবং প্রজাহৈতষী বিবিধ পরিকল্পনার কারণে প্রজাদের মধ্যে প্রবল জনপ্রিয় ছিলেন। মহামায়ার মন্দির কেন্দ্র করে বিশ্বাসী জনগোষ্ঠী তৈরী করেছিলেন। চূয়াড়, মাঝি, লোধা, কুড়মি প্রজাদের কাছে তিনি ছিলেন স্বয়ং মহামায়ার প্রতিভূ। এরপর ১৭৬০ খৃষ্টাব্দে প্রয়াত হন রাণী ভবানী। ইংরেজরা আইনের দোহাই দিয়ে রাণী ভবানীর অংশ গ্রাস করে। প্রজাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়। বিদেশী প্রভু মেনে নিতে চাইলো না উপজাতি প্রধান জনগোষ্ঠীর প্রজারা। রাণী শিরোমণি নিজের অংশের জমিদারী ত্রিলোচন খানের সাহায্যে চালাতে লাগলেন।

১৭৬৭ খৃষ্টাব্দে ইংরেজরা পাইকান জমি বাতিল ঘোষণা করতে চূয়াড় বিদ্রোহের সূচনা হল। ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। বিদ্রোহের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে সারা জঙ্গলমহল জুড়ে। চূয়াড় বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন জমিদারেরা। স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন জমিদারের নেতৃত্বে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ধলভূম থেকে ঝাড়গ্রাম হয়ে পুরো জঙ্গল মহলে। ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ নিজেকে স্বাধীন রাজা ঘোষণা করেন। মেদিনীপুরে রাণী শিরোমণির জমিদারীতেও শুরু হয় চূয়াড় বিদ্রোহ। রাণী সাহায্য করতে লাগলেন বিদ্রোহীদের।বাঁকুড়ার রাইপুরের দুর্জন সিংহের হাত ধরে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে অম্বিকানগর, সুপুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *