বাঁকুড়ায় নদীর চরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে বিতর্ক

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৭ মে: আগামী ৩১ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিনের বাকুড়া সফরে আসছেন। পরদিন সকালে তিনি কর্মিসভা করবেন গন্ধেশ্বরী নদী তীরবর্তী স্হানে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই সভার জন্য জোর প্রস্তুতি চলছে।

অপরদিকে সভার স্হানকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই স্হানে সভা হলে বহু মানুষের সমাগম হবে, এর ফলে নদী এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এই দাবী তুলে সভার স্হান পরিবর্তনের আর্জি জানিয়ছে পরিবেশবাদীরা। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসন সহ গ্ৰিনবেঞ্চে আবেদন করেছেন।

ইতিপূর্বেও এই স্হানে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হয়। সে সময়ে নদী সংলগ্ন এলাকায় সভার আপত্তি জানিয়েছিল বিজ্ঞান মঞ্চ।সেবার জেলা প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল ভবিষ্যতে আর সভার অনুমতি দেওয়া হবে না। এমনকি তৎকালীন জলসম্পদ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী নবান্নে পরিবেশবিদদের সাথে বৈঠকে জানান, আগামীদিনে নদী তটে আর কোনও সভার অনুমতি দেওয়া হবে না।কিন্তু সেই আশ্বাস কার্যত নিষ্ফলা। গন্ধেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকেও নদীর পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে নদী সংলগ্ন এলাকায় সভাতে আপত্তি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে এবং নদী তীরবর্তী এলাকায় সভার প্রতিবাদ জানাতে এক সভার আয়োজন করে নদী বাঁচাও কমিটি।কিন্তু ওই সভা করা যাবে না বলে পুলিশ প্রশাসন পরিষ্কার জানিয়ে দেয় কর্মকর্তাদের।স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফুঁসছে নদী বাঁচাও কমিটি।

কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সন্তোষ ভট্টাচার্য বলেন, সভাতে কোনও আপত্তি নেই, সভার স্হান নিয়ে আপত্তি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর মজে যাওয়া গন্ধেশ্বরী নদীর সংস্কার শুরু হয়েছে, নদীর পলি মাটি তুলে নদীর নব্যতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে, সেখানে একটা বড় সভা করলে নদী ও তার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বেই। এবারই প্রথম নয়, এর পূর্বেও এই নদীর চরে সভা হয়েছিল, তখনও প্রতিবাদ জানানো হয়, জেলা প্রশাসন আশ্বস্ত করেছিল ভবিষ্যতে কোনও সভার অনুমতি দেওয়া হবে না। সেই সময় নদী বাঁচাও কমিটির সাথে আরও কয়েকটি সংগঠনও আপত্তি জানায়। বিষয়টি গ্ৰিন বেঞ্চেও আপত্তি জানানো হয়। সে সময় অর্থাৎ ১৪/২/২০ তারিখে জল সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এই সব সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে নবান্নে বৈঠক
করেন। বৈঠকের পর তিনি জানান, আগামীদিনে নদীতটে কোনও সভা করা যাবে না বলে সার্কুলার জারি করা হবে। কিন্ত ওই পর্যন্তই। ফের সভা হচ্ছে।জনসাধারণকে বিষয়টি অবহিত করতে আমরা একটি সভা করার আয়োজন করি কিন্তু পুলিশ প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক জয়দেব চন্দ্র বলেন, নদী তটে সভা কেন? এর ফলে নদীর সামগ্ৰিক ক্ষতি হবেই, প্রভাব পড়বে বাস্তুতন্ত্রের উপর। বিষয়টি জেলা প্রশাসন থেকে পরিবেশ দপ্তর সব মহলেই জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ফল মেলেনি।

এবিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিব্যেন্দু সিংহ মহাপাত্র বলেন, আমরা নদীর চরে কোনও সভা করছি না। ব্যক্তিগত জমিতে সভা হবে। এক্ষেত্রে আপত্তি কেন।এখানে সভা হলে কোনও ক্ষতি হবে না নদীর বলে তিনি মন্তব্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *