অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ২ জানুয়ারি: “চলতশক্তি রহিত বয়সজনিত কারণে কোন বিখ্যাত ব্যক্তি মারা গেছেন। আর দেখি তখন সবাই মন্তব্য করেন ওনার মৃত্যুতে দেশের ও মৃত ব্যক্তি যে পেশায় যুক্ত ছিল তার খুব ক্ষতি হয়ে গেল। কীভাবে ক্ষতি হল? সেটাই বোধগম্য নয়। শোকের হতে পারে মাত্র।”
বাস্তবটা এমন সহজভাবেই বলতে, এমনকি লিখতেও পারেন শ্যামল চ্যাটার্জি। জন্ম ১৯৬০-এর ১৭ জুন। ভাবনায় ১৬ আনা খাঁটি বামপন্থী। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া পদবী ব্যবহারে অনাগ্রহী। শুধুই শ্যামল। একটি ভ্রমণসংস্থা চালালেও তাঁর দিবারাত্রির স্বপ্ন অঙ্গদান আন্দোলনকে সফল করে তোলা। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন অকাল মৃত্যু, আনতে পারে কোনও জীবনে নতুন সকাল। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার ফসল নিয়ে ‘মৃত্যুই শেষ কথা নয়’ শিরোনামে একটি বই প্রকাশ হতে চলেছে।
শ্যামল জানিয়েছেন, “কোমা আর মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত্যু বা Brain Death বা Brain Stem Death এক নয়। কোমা মানে জীবিত, কখনই মৃত নয়। এই ভেন্টিলেশন চালু রেখে মস্তিষ্কের বা মস্তিক কাণ্ডের মৃত ব্যক্তির থেকে তাঁর দেহ থেকে সক্রিয় ও উপযুক্ত অঙ্গগুলি সংগ্রহ করে মৃত্যু পথ যাত্রীর দেহে প্রতিস্থাপন করে তাকে নব জীবন দেওয়া সম্ভব। যদিও এক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম অবশ্যই আছে। জীবিতকালে আমরা নিজের নির্বাচিত কোনও ব্যক্তিকে আমার নিজের কিছুটা লিভার, একটি কিডনী এবং রক্ত দিতে পারি। অন্যকিছু নয়। কিন্তু মরণোত্তর কলা বা প্রত্যঙ্গদানের ক্ষেত্রে আমাদের নির্বাচিত কোনও ব্যক্তিকে তা পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার রক্ত বা কলা কিংবা প্রত্যঙ্গ কোনওভাবেই কেনা বা বেচা যাবে না, যা আইনবিরুদ্ধ।
একমাত্র মৃত ব্যক্তির সক্রিয় ও উপযুক্ত অঙ্গ সংগ্রহ করা হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দাতা অরগ্যান বা টিস্যু সংগ্রহ সম্ভব কিনা যাচাই করে নেবেন। আরো কিছু সাধারণ নিয়ম আছে। মৃতদাতার ক্ষেত্রে যে বয়স সীমা মেনে চলা হয় তা হলো। কিডনি, লিভার: ৭০ বছর পর্যন্ত। হার্ট, ফুসফুস: ৫০বছর পর্যন্ত। প্যানক্রিয়াস, অন্ত্র: ৬০-৬৫ বছর পর্যন্ত। কর্ণিয়া, ত্বক: ১০০ বছর পর্যন্ত। হার্ট ভালভ: ৫০ বছর পর্যন্ত। অবহাড়: ৭০ বছর পর্যন্ত। অবশ্যই কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে।
এর পরবর্তী প্রশ্ন আসবে মৃত দাতার থেকে গৃহীত প্রত্যঙ্গগুলি কত তাড়াতাড়ি প্রতিস্থাপন করা উচিত?
হার্ট ও হার্ট ভালভ (৪ থেকে ৬ ঘন্টার মধ্যে)। ফুসফুস (৪ থেকে ৮ ঘন্টার মধ্যে)। ইনটেন্সটাইন (৬ থেকে ১০ ঘন্টার মধ্যে)। লিভার (১২ থেকে ১৫ ঘন্টার মধ্যে)। প্যানক্রিয়াস (১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে)। কিডনি (২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে)। একটা বিষয় পরিষ্কার যে মৃত্যুর পর আমাদের মরদেহ হয়ে উঠতে পারে নব জীবনদানের আধার।“
১০ জানুয়ারি ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন পন্ডিত মদুসূদন গুপ্ত। দিনটি ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান দিবস’ হিসেবে বিবেচিত। এই দিবসটিকে স্মরণে রেখে গণদর্পণের উদ্যোগে আগামী ১০ জানুয়ারি ২০২৩ (মঙ্গলবার) মরণোত্তর দেহদান বিষয় নিয়ে গণদর্পণের অন্যতম সম্পাদক শ্যামলের লেখা ‘মৃত্যুই শেষ কথা নয়’। সংগঠনের সহ সভাপতি ও আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভটাচার্য বইটি প্রকাশ করবেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ও মরণোত্তর দেহদানে অঙ্গীকার করবেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়াও উপস্থিত থাকবেন ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য (স্বাস্থ্য অধিকর্তা, শিক্ষা, পশ্চিমবঙ্গ) ও সংগঠনের ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর ও প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার উৎপল চ্যাটার্জি সহ আরো অনেক বিশিষ্ট জন।

