স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ১০ নভেম্বর: নদিয়ার তাহেরপুর থানার অন্তর্গত কালীনারায়ণপুর পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কৃষ্ণচকপুর মন্ডলপাড়ায় এক মর্মান্তিক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
এলাকাবাসীদের দাবি, এসআইআর প্রকাশের আতঙ্কে প্রাণ হারালেন স্থানীয় এক বৃদ্ধ। মৃতের নাম শ্যামল কুমার সাহা (৭২)। তিনি মূলত বাংলাদেশের বাসিন্দা হলেও গত প্রায় ৩০ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। পেশায় ছিলেন ফেরিওয়ালা, বিভিন্ন জায়গায় শীতের কম্বল বিক্রি করতেন। পরিবারের আয়-রোজগারের ভরসা ছিলেন তিনিই।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই শ্যামলবাবু প্রবল মানসিক চাপে ভুগছিলেন। দিন দিন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন এবং প্রায়ই পরিবারের সদস্যদের কাছে নিজের আতঙ্ক প্রকাশ করতেন। প্রতিবেশীদেরও বলতেন, “আমার ছেলেদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমি আর বাঁচতে চাই না।” পরিবারের দাবি, ওই আতঙ্কই শেষ পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়েছে। শ্যামলবাবুর পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী, দুই ছেলে এবং দুই বৌমা। তাঁর দুই ছেলেই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শ্যামলবাবুর সমস্ত বৈধ নথি, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, এমনকি ২০০২ সালের বাড়ির দলিলও রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামীসহ কয়েকজনের অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম নেই। সেই কারণেই এসআইআর-এর আওতায় তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব যাচাই প্রক্রিয়াকে ঘিরে এলাকায় তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। তাদের মধ্যে শুধু শ্যামলবাবুর নয়, এই এলাকায় এমন অনেকেই রয়েছে যাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। শ্যামলবাবুর মৃত্যু সেই আতঙ্কেরই মর্মান্তিক প্রতিফলন। ঘটনাটি ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ৫০ সদস্যের দাবি, প্রশাসনের উচিত এই ধরনের আতঙ্কের অবসান ঘটাতে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিষ্কার নির্দেশনা প্রদান করা, যাতে আর কোনো নিরপরাধ মানুষ এমনভাবে প্রাণ না হারান।

