পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ মে: বর্তমান সরকারের আমলে জেলায় বেশ কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হলেও, এখনো বেশ কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা অকেজো হয়ে রয়েছে। যার ফলে বারবার সমস্যায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল পড়ুয়া ও রোগী নিয়ে যাতায়াতকারী পরিবারকে। পাকা রাস্তা, তবু মনে হবে কোনও আলপথ। সামান্য বৃষ্টি হলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সেই রাস্তা। বর্তমানে এই রাস্তার অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর যে প্রসূতি নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতেই পারল না পরিবার। ঝুঁকি নিয়ে গাড়ির ভিতরেই প্রসব করালেন আশা কর্মী। মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের পাকুড়সেনি সংলগ্ন এলাকার ঘটনা। এই ঘটনা শুধু উদ্বেগেরই নয়, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে গ্রামীণ পথের ভয়াল ছবি। তবে ওই আশা কর্মীর প্রশংসা করেছেন প্রসূতির পরিবারের লোকজন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, আশা দিদিরা আমাদের স্বাস্থ্যদপ্তরের গর্ব। দায়িত্ব নিয়ে তিনি যে ভাবে প্রসব করিয়ে মা ও শিশুকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্য।’ স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত সিং ও সোনালী সিংয়ের প্রথম সন্তানের জন্ম হবে। বুধবার ভোর তখন ৪টে। সোনালীর শরীরে অস্বস্তি বুঝে স্থানীয় আশাকর্মী মানসী পাত্রকে ফোন করেন সুব্রত। এদিকে অত ভোরে মাতৃযান বা ১০২ অ্যাম্বুল্যান্সে ফোন করলে দেরি হতে পারে, এমনই আশঙ্কা করেন আশা দিদি। তাই বুদ্ধি করে তিনি তাঁরই এক আত্মীয় বিশ্বজিৎ রাউতকে ফোন করে মারুতি গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন। উপায় না দেখে গাড়িতেই প্রসব করানোর সিদ্ধান্ত নেন আশা কর্মী মানসীদেবী।
মানসীদেবী জানান, প্রসব করানোর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ছিল না তাঁর। তবে, নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই চরম বিপদের মুহূর্তে সফল হন তিনি। গাড়ির মধ্যেই ফুটফুটে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন সোনালী। এরপরই মা ও সদ্যোজাতকে বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মানসীদেবী। ততক্ষণে কোদাল দিয়ে কিছুটা কাদা পরিষ্কার করতে সক্ষম হন গাড়ির চালক। আপাতত মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন বলেই জানান আশা কর্মী। সন্তানের মুখ দেখে পথের যন্ত্রণা ভুলেছেন সুব্রতবাবুও।