জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ২ নভেম্বর: প্রয়াত হলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বামপন্থী কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা ও সিপিএমের রাজ্য কমিটির প্রাক্তন সদস্য শেখ ইসরাইল।ক্যন্সার এবং বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যে ৭টা ১৫ মিনিট নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল মহকুমার রাধনগর এলাকার শালিকা গ্রামে নিজের বাসভবনে তিনি শেষনিঃশাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। দলের প্রবীণ নেতৃত্ব শেখ ইসরাইলের জীবনাবসানে গভীর শােকজ্ঞাপন করেছেন সিপিএমের পলিট ব্যুরাে সদস্য বিমান বসু, দলের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সম্পাদক তরুণ রায়, দীপক সরকার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
১৯৩৮ সালে তৎকালীন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার রাধানগর এলাকার শালিকা গ্রামের অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারে শেখ ইসরাইল জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রাবস্থায় দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে পড়াশােনা করেন তিনি। পড়েছেন মেদিনীপুর কলেজেও। হিন্দিতেও ডিপ্লোমা ডিগ্রি ছিল তার। পেশাগত জীবনে ঘাটালের একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। সেই সঙ্গে সুনাম অর্জন করেছিলেন রেজিস্টার্ড হােমিওপ্যাথি চিকিৎসক রূপেও।
১৯৬৮-৬৯ সালে রাধানগরে জমির আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলনের সংস্পর্শে আসেন শেখ ইসরাইল। কৃষক আন্দোলনের সংগঠক হিসাবে জনপ্রিয়তা তাঁকে নেতৃত্বে উত্তীর্ণ করে। ১৯৭০ সালে তিনি সিপিএমের সদস্যপদ পান। সেই সময় কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্বদানের জন্য তাঁকে জোতদারদের করা অনেকগুলি মিথ্যা মামলার আসামীও হতে হয়। কিছুদিন আত্মগোপনেও কাটাতে হয়।
রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পরে রাজ্যে প্রথম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৯৭৮ সালে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ ইসরাইল। সারা ভারত কৃষকসভার জেলা সভাপতি ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে হন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষকসভার সহ-সভাপতি। সিপিএমের খড়গপুর জেলা সম্মেলন থেকে তিনি পার্টির অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও। পরে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য হন। তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরবর্তী কালে তাঁকে দলীয় কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
সহজ সরল জীবনযাপন ও আন্দোলন সংগ্রামের নেতৃত্বদানের কারণে ঘাটাল সহ অন্যান এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন শেখ ইসরাইল। বিরোধীদের সন্ত্রাস মােকাবিলাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করতেন। কমিউনিস্ট পার্টির সংগঠন, আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং সাহিত্য নিয়ে অনেক বইও লিখেছেন। মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযােগী তথ্যাদি এবং অনেকগুলি কবিতার বই রয়েছে তাঁর। নন্দন ও গণশক্তিতে বিভিন্ন সময়ে তাঁর একাধিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য বই হল “মেদিনীপুর জেলার কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাস উপযোগী তথ্যাদি”।
শেখ ইসরাইল রেখে গেলেন স্ত্রী সেলিমা বিবি ও ৫ পুত্র সহ পরিবারকে। শেখ ইসরাইলের মৃত্যুতে শােকাহত ঘাটালের সিপিএম সহ অন্যান্য বামপন্থী দলের কর্মীরা। গভীর শােকজ্ঞাপন করেছেন ঘাটাল এলাকার দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশােক সাঁতরা, সুবােধ রায় প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।