আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২ ডিসেম্বর: কাকা শ্বশুরকে বাবা এবং কাকি শাশুড়িকে মা পরিচয় দিয়ে বানিয়েছেন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও স্বাস্থ্য সাথী কার্ড। পাচ্ছেন রেশন সামগ্রী। জমি-বাড়িও নিজের নামে। এমনই তথ্য উঠে এসেছে বীরভূমের মুরারই ২ নম্বর ব্লকের রুদ্রনগর অঞ্চলের তালুহাডাঙা গ্রামে। এনিয়ে বাংলাদেশি বউমার বিরুদ্ধে বিডিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন কাকা শ্বশুর। খবর চাউর হতেই গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এনিয়ে কাকা শ্বশুরের বিরুদ্ধে মারধর এবং বাবা সাজতে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বউমা সীমা খাতুন।
আদতে বাংলাদেশের বাসিন্দা সীমা খাতুন। বাড়ি যশোর জেলায়। দীর্ঘদিন আগে ওই মহিলা পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাটে পিসির বাড়িতে আসেন। সেখানেই বন্ধুর বাড়ি মুরারই ২ নম্বর ব্লকের রুদ্রনগর অঞ্চলের তালুহাডাঙা গ্রামের নুর আলম শেখের। নুর আলম সে সময় মুম্বাইয়ের দাদরা এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। বছর সাত – আটেক আগে বন্ধুর বাড়ি বসিরহাটে বেড়াতে গিয়ে সীমার সঙ্গে পরিচয় হয়। মুম্বাই থেকে প্রায় ফোনে কথা হত। এরপরেই সাত বছর আগে বাংলাদেশি সীমা খাতুনকে বিয়ে করেন নুর আলম। কিছুদিন কর্মক্ষেত্রে রাখার পর জমিজমা চাষাবাদের জন্য স্ত্রীকে গ্রামে রেখে যান তিনি। এরপরেই ভোটার কার্ড করানোর সময় কাকা শ্বশুর আরজাহান শেখ ও শ্বাশুরি মুনেফা বিবিকে বাবা-মা পরিচয় হিসেবে তুলে ধরে সরকারি নথিতে ভুয়ো তথ্য প্রদান করা হয়।
ঘটনাটি সামনে আসে সম্প্রতি এনুমারেশন ফর্ম ফিল-আপের সময়। ২ নম্বর তালুয়াডাঙ্গা গোবিন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে তাঁর নাম রয়েছে। ক্রমিক সংখ্যা ১৪৬। আরজাহান বিষয়টি জানতে পেরে বিডিও অফিসের দ্বারস্থ হন। অভিযোগে তিনি জানান, তাঁর অনুমতি ছাড়াই তাঁর নাম ‘বাবা’ হিসেবে এবং তাঁর স্ত্রীর নাম ‘মা’ হিসেবে ব্যবহার করে সীমা খাতুনের ভোটার কার্ড তৈরি করা হয়েছে।
ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সীমা বিবি। তিনি বলেন, “ভোটার কার্ড তৈরির জন্য কাকা শ্বশুর তাঁর কাছে থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। এখন ওরা ভাবছে আমি পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ নেব। সেই কারণে আমার মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সীমার স্বামী নুর আলম শেখ বলেন, “মুম্বাইয়ে শ্রমিকের কাজ করার সময় বন্ধুর মাধ্যমে সীমার সঙ্গে বসিরহাটে পরিচয় হয়। প্রায় ১৪ বছর আগে বিয়ে হয়। বর্তমানে আমাদের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। আমি ৪ নভেম্বর মুম্বাই থেকে গ্রামে ফিরেছি। ওইদিন আমার কাকা, কাকি এবং ভাই মিলে স্ত্রীর মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। আমি ঘটনার বিচার চাই। আমার স্ত্রী বাংলাদেশি। মনে করলে সরকার তার বিচার করুক।”
বিষয়টি চাউর হতেই গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি নাগরিককে কীভাবে স্থানীয় নথিতে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে দেখানো হলো সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিএলও মোহন কুমার মাল বলেন, “আমাকে ২০০২ সালের একটি তথ্য দিয়েছে। আমরা সেটা যাচাই করে ফর্ম জমা নিয়েছি। কোনো অভিযোগ এলে পুনরায় যাচাই করা হবে। তবে বিডিও অফিস থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি।”

