আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১২ আগস্ট:
কোভিড পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে লকডাউন ঘোষণা করলো প্রতিবেশী দেশ ভূটান। আপাতত ভূটান থেকে খবর টানা ৭ দিন লকডাউন চলবে। করোনা ভাইরাস ছরিয়ে পড়লে তা আর বাড়তেও পারে। তবে আচমকা ভূটান জুড়ে লকডাউন ঘোষণার জেরে সরাসরি প্রভাব পড়লো আলিপুরদুয়ারে।
জেলার অন্যতম ব্যবসা কেন্দ্র জয়গাঁর সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে মঙ্গলবার থেকেই। ভূটানে ঠিক কতদিন লকডাউন চলবে তা পরিস্কার হয়নি কোনও মহলের কাছেই। আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্র কুমার মিনা বলেন, “এটা প্রতিবেশি দেশের সিদ্ধান্ত। আমরা খবর পেয়েছি। আপাতত দু দিকেই যাতাযাত বন্ধ।পরিস্তিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”
ভারত-ভূটান সীমানার জয়গাঁও-র অতিরিক্ত পুলিস সুপার কুন্তল ব্যানার্জি বলেন, “মার্চ মাস থেকেই সীমান্ত বন্ধ রয়েছে দুদেশের। জয়গাঁর পরিস্তিতি স্বাভাবিক রয়েছে।”
উল্লেখ্য, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভূটানে মাল রপ্তানির একমাত্র করিডোর হিসেবে চিহ্নিত জয়গাঁও শহর। জয়গাঁও শহরের ৯৫ শতাংশ ব্যবসা ভূটানের সঙ্গে। জয়গাঁও থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের অন্যতম রাকেশ পান্ডে বলেন, “যতটুকু মাল রপ্তানি চলছিল তাও বন্ধ হল। ব্যবসাতে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন হবে না। সমস্যা হবে।”
আলিপুরদুয়ার টাউন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রসেনজিৎ দে বলেন, “টানা লকডাউন চললে দুই দেশের ব্যবসাতে প্রভাব পড়বে। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার থেকে যে কৃষি পন্য রপ্তানি হয় তা বন্ধ হলে ক্ষতি হবে কৃষকদের।”
প্রাথমিকভাবে মঙ্গলবার ভূটানের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, তাতে দেখা গেছে চলতি মাসে, করোনায় সংক্রমিত ২১৩ জন, যার মধ্যে ৮৬ জন রাজধানী শহর থিম্পুর বাসিন্দা। গেলিফু জেলার ১১১জন। এছাড়াও পারো, ঝেমেগাঙ্গ, বুমথাং, শিরাং-এ কোভিড আক্রান্তদের হদিস মিলেছে। তবে আলিপুরদুয়ার ঘেঁষে থাকা ফুন্টশেলিং শহর থেকে কোনও রোগির খোঁজ মেলেনি, যা কিছুটা হলেও স্বস্তি দিয়েছে স্থানীয় মহলকে।মঙ্গলবার ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং এর তরফে জারি করা এক সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে সম্পূর্ণ লকডাউন পালন করা হবে বলে জানানো হয়।
এদিকে আলিপুরদুয়ারের সীমান্ত শহর জয়গাঁর দুটি গেট ও পাশাখা দিয়ে ভুটানগামী তিনটি পথই সিল করে দেওয়া হয়েছে। তবে লকডাউনের ওই পাঁচ দিনের মধ্যে ভুটানে নতুন করে কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে, লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়তে পারে বলে ওই সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ভূটানে টানা লকডাউন শুরু হলে আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি কয়েক হাজার পন্যবাহী ট্রাক ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক, এশিয়ান হাইওয়েতে দাড়িয়ে যাবে। আগাম আশঙ্কা পচনশীল দ্রব্য থাকলে তা ট্রাকেই পচে যাবে।পাশাপাশি এও জানা গেছে, ইতিমধ্যেই ভারত থেকে যারা পন্যবাহী ট্রাক নিয়ে ভূটানে প্রবেশ করেছিল তাদের একটা বড় অংশ সেখানে আটকে গিয়েছে। দ্রুত যাতে তারা ভারতে প্রবেশ করতে পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে বলে জানিয়েছেন একটি মহল। জানা গেছে, আচমকা লকডাউনের ফলে আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি ব্যবসায়ীদের একটা অংশ মঙ্গলবার থেকে মাল রপ্তানি স্থগিত করেছেন। কবে এই সমস্যা মিটবে সেদিকেই নজর রয়েছে সকলের।