সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৬ ডিসেম্বর: রাস্তা তৈরিতে ফের নিম্ন মানের কাজের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেন সভাধিপতি অনুসূয়া রায়। সিমলাপাল, সোনামুখী, তালডাংরা, বড়জোড়ার পর মেজিয়া ব্লকে এই নিম্ন মানের কাজের অভিযোগ উঠে। অভিযোগ পেয়েই নিজে রাস্তার কাজ দেখতে এসে হতবাক হয়ে গেলেন খোদ সভাধিপতি অনসূয়া রায়। আজ মেজিয়ার অনুরাগপুরে এসে তিনি ঠিকাদারের কাজ বন্ধ করে দিয়ে গেলেন। তিনি আসছেন শুনে ঠিকাদারের কোনও লোকজনকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। ঘটনাস্থল থেকেই তিনি ফোনে ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ফিরে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মেজিয়ার তৃণমূল নেতা মলয় মুখার্জি, সুভাষ মিশ্র সহ এলাকার অভিযোগকারী বাসিন্দারা।

এলাকার বাসিন্দারা বলেন, অনুরাগপুর থেকে মোচড়াকেন্দ্র যাবার কাঁচা রাস্তাটি পাকা রাস্তা করার দাবি দীর্ঘদিনের। এখানের মানুষ যোগাযোগের অভাবে কেমন আছেন এব্যাপারে বাম আমল থেকে হাল আমল কেউ ফিরেও দেখেননি। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পর এই প্রথম অনুরাগপুর গ্রামের মানুষ পিচ ঢালা রাস্তা পেল। কিন্তু প্রথমেই বেতাল হয়ে পড়ল সেই কাজের শ্রী। বাসিন্দাদের তোলা বেনিয়মের অভিযোগকে এক অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিলেন শালতোড়ার বিজেপি বিধায়ক চন্দনা বাউরি। তিনি বলেন, শালতোড়ার হারের জ্বালা ভুলতে পারেনি তৃণমূল। তাই আমার বিধানসভা এলাকায় সেভাবে কাজ দিতে চাইছে না আর যেখানে হচ্ছে সেখানে জোড়াতালি মার্কা কাজ হচ্ছে, কাজের বেহাল দশা দেখলেই মাথা ঘুরে যাবে। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নাম বদলে চালাচ্ছেন দিদিমণিরা।
চন্দনা বাউরি বলেন, ঠিকাদারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। উনি ১০০ টাকার কাজ ৪০ টাকায় সমাপ্ত না করলে জমি জায়গা বিক্রি করতে বাধ্য হবেন। কারণ তৃনমূলের উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কাটমানি দিতে হবে ঠিকাদারকে। তার দাবি গ্রামের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন বলেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি এখানে আসতে পেরেছেন। উনি যদি সত্যি সত্যিই সদিচ্ছা নিয়ে এসে থাকেন তাহলে পুরো রাস্তার পিচ তুলিয়ে ফের কাজ শুরু করান। উনি তো দেখলেন অর্ধেক রাস্তার কাজ শেষ হতে না হতেই কিভাবে রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে। নখের আঁচড়ে উঠে আসছে রাস্তায় ব্যবহৃত পিচের চাঙড়। অভিযোগ পাওয়ার পর সরেজমিনে গিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ মানলেন খোদ জেলা পরিষদের সভাধিপতিও। তবে বিধায়কের অভিযোগ তিনি উড়িয়ে দিয়েছেন।
অনসূয়া রায় বলেন, বিজেপি চোখের সামনে বিরোধীতার চাদর ফেলে রেখেছে। তাই রাজ্যের উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, এখানে কাজ ভালো হচ্ছে না বলে অভিযোগ পেয়েছিলাম। তাই এসেছি। ঠিকাদারকে বলেছি কাজ বন্ধ রেখে ভালো নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে। যতক্ষণ না তা হচ্ছে ততক্ষণ কাজ বন্ধ থাকবে।
গ্রামের বাসিন্দা গৌর ঘোষ, পান্ডব ঘোষেদের অভিযোগ, প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছি কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। ঠিকাদার উল্টে আমাদের হুমকি দিতেন কাজ বন্ধ করে মেশিনপত্র সব উঠিয়ে নিয়ে চলে যাবার। প্রথমে যে বোল্ডার ও মোরাম দিয়ে কাজ হয়েছে সেটাও ঠিকমত জল দিয়ে রোলার চালানো হয়নি। তাছাড়াও পিচ ও পাথরের গুণমান ঠিক নেই। আমাদের দাবি মত কাজ হয় কি না সেটাই এখন দেখার।

