অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৩১ ডিসেম্বর:
“আমাদের দেশে গণ বিপ্লবের কাজ শেষ হয়ে যায়নি। ইংরেজ দস্যুরা আমাদের দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে সত্য, আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন একথাও সত্য। কিন্তু এখনও গণ বিপ্লবের কাজ শেষ হয়ে যায়নি।“ ১৯৯২ সালের ২১ জুন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে এটাই ছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বীর বিপ্লবী, আজীবন সংগ্রামী গণেশ ঘোষের শেষ বক্তব্য। পরদিনই তিনি প্রয়াত হন। মারা যাওয়ার আগে যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ তিনি করে যান, তার অন্যতম প্রধান ও স্মরণীয়টি হল ১৯৭০ সালে বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা স্থাপন।
গণেশবাবু চিরনিদ্রায় যাওয়ার আগে বিপ্লবের আদর্শের কথা বলে গিয়েছিলেন। তারপর কেটে গিয়েছে তিন দশকেরও বেশি সময়। চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের অবিস্মরণীয় কীর্তির কথা এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ভুলে যেতে বসেছে। অর্থাভাব, লোকাভাব প্রভৃতি নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার বয়স্ক কর্মকর্তারা বিপ্লবীদের আদর্শ জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কলকাতা পুরসভার সাম্প্রতিক এক ভাবনায় তাঁরা রীতিমত বিস্মিত ও ব্যথিত।
রবিবার সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সংস্থার সভানেত্রী লীলা পুরকায়স্থ এ ব্যাপারে তাঁর ক্ষোভের কথা জানান। সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে এর সম্পত্তিকর পুরসভা মুকুব করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এর পরেও পুরসভা ৯ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার সম্পত্তিকরের নোটিশ পাঠিয়েছে। গত ২ মে সংস্থার তরফে পুরসভায় ওই নোটিশ প্রত্যাহারের আবেদন পাঠানো হয়। ১৭ মে পুরভবনে মেয়রের সঙ্গে দেখা করে সংস্থার তিন প্রতিনিধি বিষয়টি ফের বিবেচনার আবেদন করেন। সংস্থার তরফে মেয়রের আবেদনে ২২ জুলাই ফের পুরকর প্রত্যাহারের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু এর ইতিবাচক উত্তর এখনও আসেনি সংস্থায়।
এ ছাড়াও সংস্থার ভবনের সামনে ফুটপাথের দোকান ভবনের একতলার দরজা, জানলা প্রায় ঢেকে দিয়েছে। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে গত ২৬ অক্টোবর পুরসভায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফুটপাথের সামনে দখলদারদের সরানো গেলে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের আবক্ষ মূর্তি বসিয়ে জায়গাটার সৌন্দর্যায়নের একটা পরিকল্পনাও আছে। স্থানীয় পুরমাতা মৌসুমী দাস সংস্থার অছি পরিষদে আছেন পুরসভার প্রতিনিধি হিসাবে। সংস্থার প্রতি তাঁর সহমর্মিতাও আছে। কিন্তু মসৃণ গতিতে এগোতে পারছে না বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থা।
এদিন এজিএম শুরুর আগে সংস্থার ভবনের লাগোয়া তারকেশ্বর দস্তিদার উদ্যানে সূর্য সেন, গণেশ ঘোষ ও অম্বিকা চক্রবর্তীর আবক্ষ মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়।