পুলিশ এবং তাদের পরিবারকে অপমান করে, গায়ে হাত দিয়ে দেখান! নবান্ন থেকেই বিরোধীদের আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রীর

রাজেন রায়, কলকাতা, ৮ সেপ্টেম্বর: তিনিই যে রাজ্যের প্রকৃত পুলিশ বন্ধু এবং বিরোধীরা পুলিশের শক্র, তা প্রমাণ করতে মঙ্গলবার নবান্ন থেকে পুলিশ দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠানে নাম না করে বিরোধী রাজনৈতিক দলকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারই
তৃণমূল কংগ্রেসের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ট্যুইট প্রকাশ্যে আসে। সেখানে দেখা যায়, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন,’রাজ্যে রোজ বিজেপি কর্মীরা খুন হচ্ছেন। মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে বিজেপি কর্মীদের। আর মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই এসব অত্যাচার করছে পুলিশ। ক্ষমতায় এলে এসব পুলিশকর্মীদের কান ধরে উঠবোস করাবো।’

সেই প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন,’পুলিশ আপনাদের ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তা দিচ্ছে। আর আপনারা সেই পুলিশকেই কান ধরে উঠবোস করানোর হুমকি দিচ্ছেন। তাদের পরিবারকে ভয় দেখাচ্ছেন। এত বড় অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? বলা হচ্ছে ঘর থেকে বের করে করে মারা হবে। পুলিশের স্ত্রী, সন্তানদের গায়ে হাত দেওয়া হবে। মনে রাখবেন, গায়ে হাত দিলে কেউ পার পাবেন না। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আপনাদেরকে কারা কারা কান ধরে নিয়ে আসে সেটা আগে দেখুন।’ তিনি আরও বলেন, মনে রাখবেন আমি কাউকে ভয় পাই না। জন্ম ও মৃত্যু একদিনই হবে। কিন্তু যতদিন বাঁচব লড়াই করেই যাব। বাঁচলে বাঘের মতো বাঁচব, মরলে একদিনে মরব।’

সোমবার ভাইরাল হওয়া অন্য একটি ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ পোস্টের কথা টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই হোয়াটসঅ্যাপে লেখা ছিল এবছর পুজোয় সারারাত ঘুরে প্রতিমা দর্শন বন্ধ। পঞ্চমী থেকে একাদশী পর্যন্ত বিকেল পাঁচটার পর থেকে জারি থাকবে নাইট কারফিউ। মণ্ডপে একসঙ্গে পাঁচজনের বেশি প্রবেশ করা যাবে না এবং প্রত্যেকের থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। অষ্টমীর অঞ্জলিতে ফুল দেওয়া যাবে না। প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় শোভাযাত্রা বন্ধ রাখার কথাও। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্য প্রশাসনের কোনও মিটিংই হল না অথচ হোয়াটসঅ্যাপে এবারের পুজো প্রক্রিয়া ভাইরাল হয়ে গেল। নির্দিষ্ট রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার জাতীয় উৎসবকে নিয়ে আপনারা ছেলেখেলা করছেন। যারা এসব পুজো নিয়ে ভুয়ো সংবাদ ছড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবো। ধরা পড়লে তাদের কান ধরে জনগণের সামনে একশোবার উঠবস করাবো। এর বিহিত হবেই। আমি পুলিশকে বলেছি বিষয়টা দেখতে। ক্রুদ্ধ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোন হরিদাস এরা, মানুষে মানুষে দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। নির্লজ্জের দল, পাষণ্ডের দল, শোষণের দল, অসভ্যের দল, অশিক্ষিতের দল সবকিছুর সীমারেখা থাকা দরকার।’

পাশাপাশি বিপুল আর্থিক ও পরিকাঠামো ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষ করে গ্রামীণ পুলিশ, ভিলেজ পুলিশ, আশাকর্মীদের জন্যও ছুটি বৃদ্ধি থেকে আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করলেন তিনি। রাজ্যের জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলা যেমন ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর-পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় ৫৫০০ জুনিয়র কনস্টেবলকে সরাসরি কনস্টেবল পদে উন্নীত করলেন। একই সঙ্গে সিভিক পুলিশ, হোমগার্ড, ভিলেজ পুলিশকে বোনাস বৃদ্ধির পাশাপাশি অবসরের পর সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের পূর্ব ঘোষিত পেনশন ও মাভৈ প্রকল্প ছাড়াও পুজো বোনাস ঘোষণা করেন তিনি।

আনন্দপুর ঘটনার রেশ ধরে রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইমকে বিশেষ ভাবে সক্রিয় হতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী।প্রয়োজনে চাকরিহীন সাংবাদিকদের সসম্মানে ২ বছরের ইন্টার্নশিপ করিয়ে সাইবার পরিকাঠামো উন্নতির পরামর্শ দেন তিনি।এছাড়াও জঙ্গলমহল, বেলপাহাড়িতে ভোটের আগে ফের মাওবাদী কার্যকলাপ বাড়ছে কি না, তা নজর রাখতে পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সকেও সক্রিয় হতে বলেন। বলে দেন, ভাল কাজ করলে প্রশাসনের তরফ পুরষ্কার দেওয়া হবে। দিন নবান্ন থেকে আরও একটি নতুন লালবাজার কন্ট্রোল রুম, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব-সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ব্যারাক ও থানার নতুন ভবনের একাধিক উদ্বোধন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *