স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ২৮ জানুয়ারি: বিনা চিকিৎসায় যুবকের মৃত্যু ঘিরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। বিকল অক্সিজেন সিলিন্ডার। রোগী ছটফট করলেও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি নার্স, ওয়ার্ড বয় কিংবা আয়া কেউই। এমনই অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মৃতের আত্মীয়রা। পরিস্থিতি সামাল দিতে ছুটে আসে পুলিশবাহিনী।
উল্লেখ্য, বাড়িতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় মাকে পেছনে বসিয়ে বাইকে চালিয়ে চিকিৎসার জন্য রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এসেছিল এক যুবক। কিন্তু আর বাড়ি ফেরা হল না। বিনা চিকিৎসায় ছটফট করতে করতে বেড়িয়ে গেল প্রাণবায়ু। এমনই অভিযোগ পরিবারের। মৃত যুবকের নাম রুবাই রজক। বয়স ২২ বছর। বাড়ি রায়গঞ্জ শহরের উকিল পাড়া এলাকায়। পরিবার সূত্রের খবর, রুবাইয়ের ২টি কিডনিই বিকল। বছর খানেক আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। বাইরে চিকিৎসা করানোর পর বর্তমানে কিছুটা সুস্থই ছিল। তার মা বেবী রজক বলেন, আগামী ৬ তারিখ ছেলের একটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে শুক্রবার গভীর রাতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। কিছুক্ষণ বাদে মাকে বাইকের পেছনে বসিয়ে নিজে বাইক চালিয়েই রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আসে রুবাই। কিন্তু তারপরই ঘটে বিপত্তি।
চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন রুবাইয়ের মা। তিনি জানান, হাসপাতালে পুরুষ বিভাগে ঢোকানোর পর কোনো রকম চিকিৎসা হয়নি। ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট বাড়লেও অক্সিজেনের সুষ্ঠ কোনো ব্যবস্থা ছিল না সেখানে। প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিকল। কোনো নার্স বা ওয়ার্ডবয় কেউই এগিয়ে আসেনি উল্টে এমন দুঃসময়ে এক নার্স দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। ফলে বিনা চিকিৎসায় ছেলেটি ছটফট করতে থাকে, নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে অনর্গল। বেশ কিছুক্ষণ এই অবস্থায় থেকে মৃত্যু হয় রুবাই রজকের।
এরপরই ব্যপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে। ক্ষোভে পেটে পড়েন মৃতের মা। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি ওয়ার্ড বয় ও নার্সদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় চূড়ান্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রঞ্জন কর নামের ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অপর এক রোগী। তিনি বলেন, চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় ছেলেটি মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে। হাসপাতালের তরফে কোনোরকম পরিষেবা মেলেনি বলে অভিযোগ করেন রঞ্জন বাবু। যদিও এবিষয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দিতে নারাজ কর্তব্যরত নার্সরা। ওয়ার্ডে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ছুটে আসে পুলিশ বাহিনী। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে মেডিক্যাল কলেজের মত একটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এমন পরিষেবা ঘিরে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন। জরুরিকালীন নূন্যতম পরিষেবায় কেন এমন গাফিলতি হল তা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ ছড়িয়েছে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়দের মধ্যে।
মৃত রুবাই রজক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শহর সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। সে কারনে এদিন হাসপাতালে ভিড় জমান সংগঠনের কর্মীরা। উপস্থিত হন সংগঠনের জেলা সভাপতি অনুপ কর। এই ঘটনার তদন্তের দাবী জানিয়েছেন তিনি।
অপরদিকে, ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান রায়গঞ্জ পুরসভার উপ পুরপ্রশাসক অরিন্দম সরকার। তিনি হাসপাতালে পৌঁছে মৃতের পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলেন। মৃতের পরিবারের লোকজনদের সমবেদনা জানান তিনি। এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অরিন্দমবাবু। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসক, নার্সের গাফিলতির জেরে চলে গেল একটি তরতাজা প্রাণ। রুবাই রজক স্নাতকোত্তর
প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছিলেন। এমন একটি ছেলেকে শুধুমাত্র
চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে প্রাণ হারাতে হলো। সরকারি এই হাসপাতালে সমস্ত রকম সুবিধে রয়েছে। কিন্তু সঠিক সময়ে অক্সিজেন না দেওয়ার কারণে মৃত্যু হলো তার। যাকে চরম গাফিলতির চরমতম সীমা বলে ক্ষোভ ব্যক্ত করেন অরিন্দম সরকার।
অন্যদিকে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রায়গঞ্জ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি প্রিয়ঙ্কর রায় বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত করে গাফিলতির প্রমাণ পেলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।