সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৪ জুন: উত্তরপ্রদেশে উন্মত্ত জনতাকে শাস্তি দিতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে, রাঁচিতে পুলিশ পিটিয়ে তুলছে সেখানে এরাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হাতজোড় করছেন। আজ বাঁকুড়া শহরের তামলিবাঁধ মাঠে বিজেপির ডাকে কেন্দ্রীয় সরকারের আট বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এবং সন্ত্রাস মুক্ত, সমতা যুক্ত রাজ্য করতে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। এই জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া সমালোচনা করেন শুভেন্দু অধিকারী।
সভা সকাল ১০’৩০ শুরু হবার কথা থাকলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সময়মতো উপস্থিত না হওয়ায় সভা কিছুক্ষণ পিছিয়ে যায়। অনেক দেরিতে সভাস্থলে এসে পৌঁছালেও চড়া রোদ উপেক্ষা করে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতেই শুভেন্দু অধিকারী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাঁকুড়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভগবান রামচন্দ্রকে স্মরণ করে বলেন, আমাদের পিসি মনি যিনি ঈদের দিন রেড রোডে নামাজ পড়তে যান হিজাব পরে, তিনি তার পুলিশের নাম দিয়েছেন মমতা পুলিশ। কয়েকদিন আগেই তাঁর নন্দীগ্রামের অফিসে দলবেঁধে ঢুকেছিল, সেটা আপনারা দেখেছেন। এই বাঁকুড়াতে রামনবমীর মিছিলে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের পনেরোটা হিন্দু তরতাজা ছেলেকে বিনা কারণে জেলে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন। তিনি তাদের স্যালুট জানান তার বক্তব্য শুরু করার আগে। এর পরে তিনি সভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, এত গরম উপেক্ষা করেও এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।
বাঁকুড়ায় মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক এবং জয়েন্ট পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বাঁকুড়ার ছাত্র-ছাত্রীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি যেমন ভাইপোকে তোলাবাজ ভাইপো বলি, সেরকম বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ ভাইপোকে হরিদাস ভাইপো বলে। তিনি এর জন্য সৌমিত্র খাঁ’কে ধন্যবাদ জানান। এর পরে তিনি নরেন্দ্র মোদীর ৮ বছরের সুশাসনের কথা তুলে ধরে এই রাজ্যে যে অপদার্থ সরকার চলছে, একদিকে দুর্নীতি অন্যদিকে হিংসা, তোষণ নীতির মধ্য দিয়ে গোটা বাংলাকে একেবারে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ। তিনি তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, এখানে পানীয় জল পাচ্ছেনা মানুষ, ডিএ পাচ্ছে না, নতুন কোনো বিনিয়োগ আসবে না, শূন্য পদে নিয়োগ হবে না, স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া যাবে না, এই বাংলায় আয়ুষ্মান ভারত চালু হবে না, এইসব মেনে নেওয়া যায় না। কিছু মানুষ ভুল বুঝে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভোট দিয়েছিলেন। তাই আমরা দেখাতে চাই মোদীজির নীতিতে সবকা সাথ সবকা বিকাশ সবকা প্রয়াসের কথা বলেন এবং করে দেখিয়েছেন। আর পশ্চিমবঙ্গে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি?
এখানে প্রত্যেক দিন চাকরি যাচ্ছে, কখনো পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরি যায়, কাল ২৬৯ জন প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি গেছে, এটাতো দুর্নীতির হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এই জেলাতেও অসংখ্য দুর্নীতি হয়েছে। এখানে বাঁকুড়া জেলায় ওন্দার প্রাক্তন বিধায়ক গার্লফ্রেন্ডকেও চাকরি দিয়েছেন বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি একটাও মিথ্যা কথা বলি না। আমি আপনাদের মতোই গ্রামেরই ছেলে। পান্তা, মুড়ি খাই, আমরা সব গ্রামেরই লোক। এদিকে লালমাটি আর ওদিকে বালুমাটি। আমাদের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুরের মধ্যে আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক আছে। তিনি বলেন, দক্ষিণ কলকাতার কিছু লোক সারা জীবন ধরে ক্ষীর খাবেন। আর লালমাটি বালুমাটির লোক চিরদিন বঞ্চিত থাকবেন এই জিনিসকে আমাদের শেষ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, এখানে আমি মাঝে মাঝেই আসবো। এই জেলাতে এমপি লেডের কাজ করতে দেয়না ডিএম (ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট)। কারণ সব ব্যবস্থাটাই রাজনীতিকরণ করে দিয়েছেন পিসিমণি। এই চোর ও দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে সরাতে হবে। মিড ডে মিল, ১০০ দিনের কাজ, রেশন সব নাকি দিদিমণি দিচ্ছে? আজ সবাই সত্যটা বুঝতে পারছে।
তিনি আরো বলেন, এখানে যারা আছে তাদের মধ্যে ৯৯.৯৯% মানুষ সনাতন ধারাকে বিশ্বাস করেন, বাড়িতে তুলসী মঞ্চ আছে, গীতাকে মানেন, আদিবাসীরাও আমাদের এই একই কালচারের মধ্যে আছেন। আমরা সবাই ভারতবর্ষের যে কালচার সনাতনী
ধারাকে বিশ্বাস করি। গত চারদিন ধরে যা হচ্ছে সে খবর তো আমাদের কাছে আছে? এখানে বাঁকুড়ার মুসলিম প্রধান এলাকা পুনিশোলে বেরোতে পারেননি, কারণ হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ছেলেরা এখানে ঘিরে রেখেছিল বলে তিনি জানান। এই বাংলাকে জ্বালিয়েছে গোটা চার দিন ধরে। যদি না জাগেন এই বাংলা আর থাকবে না।
ন্যাশনাল হাইওয়ে (NH4) ১৩ ঘণ্টা বৃহস্পতিবার আটকে করে রাখা হয়েছে। যেখানে উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার, উন্মত্ত জনতাকে শাস্তি দিয়েছে, বুলডোজার চালিয়েছে, রাঁচিতে পুলিশ পিটিয়ে তুলে দিচ্ছে, তখন এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হাতজোড় করে বলছেন তোমরা ওঠো। কে শুনবে কার কথা। চড়েছেন তো বাঘের পিঠে। উপরে থাকলেও বিপদ আর নামলেও বিপদ। আপনার কথা শুনবে কে? আপনার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী? সে বলছে মুখ্যমন্ত্রীর এটা কাজ নয়। এটা ধর্মীয় ব্যাপার। আলেম, উলেমা, ইমাম সাহেবরা কথা বলবেন। এই হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থা। আজ পশ্চিমবাংলাকে বাঁচানোর জন্য বিচার বিভাগকে হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। মমতা ব্যানার্জি যতদিন থাকবে ততদিন বাংলাদেশের বর্ডার দিয়ে রোহিঙ্গারা এসে তাণ্ডব করবে। এটাই হচ্ছে আমাদের ভবিতব্য। তাই তিনি সবাইকে শক্ত হাতে গেরুয়া ঝান্ডা ধরার কথা বলেন। আমরা আগে শপথ গ্রহণ করি, অভাব অভিযোগ পরে মেটাবো। মান অভিমান পরে করব। আগে একটা বুলডোজার সরকার নিয়ে আসি। যে সরকার বুলডোজার চালিয়ে এই আবর্জনা গুলোকে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে আর এই বাংলা স্বামী বিবেকানন্দের বাংলায় পরিণত হবে।
গোটা তৃণমূল দলটাই চোর। এখানে তালডাংরা আরেকজন এমএলএ হয়েছে তাকে লোকেরা কয়লা চক্রবর্তী বলে। চৌকিদার হিসাবে বিরোধী দলনেতা আপনাদের সঙ্গে থাকবে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারের আট বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাঁকুড়ার হিন্দু হাই স্কুল মাঠ থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়। লালবাজার মোড় থেকে পদযাত্রায় বিরোধী দলনেতার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও আসতে দেরি হওয়ায় তিনি অংশ নিতে পারেননি। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছু পর সভা শুরু হয়। আজকের সভায় উপস্থিত ছিলেন বাঁকুড়া জেলা বিজেপির সভাপতি সুনীল রুদ্র মন্ডল, বাঁকুড়া লোকসভা সাংসদ ডাঃ সুভাষ সরকার, বাঁকুড়া বিধানসভার বিধায়ক নীলাদ্রি শেখর দানা, শালতোড়ার বিধায়ক চন্দনা বাউরী, বিষ্ণুপুরের বিজেপির সভাপতি বিল্লেশ্বর সিংহ, সাংসদ সৌমিত্র খান সহ জেলা ও রাজ্য স্তরের বহু নেতা।