মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরুলিয়ার সরকারি সভামঞ্চ থেকে কেন্দ্রকে নিশানা, একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৬ ফেব্রুয়ারি: সরকারি সভা মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করে তোপ দেগে ভোট বাক্স অটুট রাখার কৌশল নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া ২ নম্বর ব্লকের হুটমুড়া ফুটবল ময়দানে প্রশাসনিক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলতে গিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন তিনি। সরকারি পরিষেবা প্রধান ওই অনুষ্ঠানে একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে উপভোক্তাদের হাতে নানান পরিষেবা ও প্রকল্পের সংশাপত্র নিজের হাতে তুলে দেন তিনি। তিনি বলেন, “পুরুলিয়ায় এম পি, এমএলএ না থাকা সত্বেও ভালোবেসে উন্নয়ন করছি। ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখে দিয়েছে, সংখ্যালঘু তপশিলি উপজাতি ভুক্ত ছাত্রদের বৃত্তির টাকা বন্ধ করে দিয়েছে, খাদ্যের ভর্তুকি কমিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। আমরা কিন্তু সবটাই করছি এবং করে যাবো। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

বিজেপিকে নিশানা করে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান বলেন, “যারা ভোটের সময় এতদিন বলে এসেছিল বিজেপিকে ভোট দিন। সব করে দেবে। কিন্তু একটা কাজও করেনি। আর কিছু বিজেপির লোক আছে ভাড়া করা, গ্রামে গ্রামে গিয়ে উস্কানি দেয়, দাঙ্গা লাগায়। আদিবাসীদের গিয়ে বলে এই চাও ওই চাও।” বিজেপির উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কিছু করনি তোমরা। আদিবাসীদের সারনা ধর্ম, কুড়মারি সব ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি।” মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপস্থিত লক্ষ্মীর ভান্ডার সুবিধা প্রাপকদের ভোট ব্যাঙ্ক নিশ্চিত করতে তাঁদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনারা ৬০ বছর বয়স হলেই বার্ধক্য ভাতা পাবেন।”

জেলা শাসক, বিডিও, পুলিশ সুপার ও ডাক্তারদের জনসংযোগ বাড়াতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর প্রায় ১টার সময় মেদিনীপুর থেকে আকাশ পথে পুরুলিয়ার হুটমুড়া ময়দানে পৌঁছান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা মঞ্চে প্রায় এক ঘন্টা উপস্থিত ছিলেন এবং প্রায় ২৭ মিনিট বক্তব্য রাখেন তিনি।

এদিনের সভা মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তৃণমূল সুপ্রিমো। “বিজেপির অত্যাচার আর জুলুম অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে হবে।” তবে, কোথায় কীভাবে কাদের নিয়ে জোট তা খোলসা করেননি তিনি।

এছাড়াও তিনি বলেন, “কুড়মি সহ আদিবাসীদের জন্য অনেক কাজ হয়েছে। দেড় কোটি সাঁওতাল ছেলে মেয়েকে স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে। ওবিসি স্কলারশিপ বন্ধ হওয়ায় মেধাশ্রী প্রকল্প করা হয়েছে। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে জঙ্গল সুন্দরী কর্মসংস্থান প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। রাজ্যে তিনটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডোর তৈরি হচ্ছে। ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। প্রচুর কাজের সুযোগ বাড়বে বলে প্রতিশ্রুতি দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”

এদিনের পুরুলিয়ার ওই প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ছাড়াও পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা, জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব্যানার্জি, মন্ত্রী সন্ধ্যারানী টুডু, পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় ব্যানার্জি সহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের অন্যান্য আধিকারিক এবং তৃণমূল নেতৃত্বরা। সভা শেষে বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে আকাশপথে রওনা দেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *