অমরজিৎ দে, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ৭ আগস্ট: ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে চারদিন ধরে রাজ্যস্তরীয় অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও প্রতিবছর ৯ আগস্ট এই দিবস পালন করা হয়, তবে এবছর তা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। উৎসবজুড়ে থাকছে আদিবাসী নৃত্য, গান, ললললও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
উদ্বোধনী ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ঝাড়গ্রাম জেলা আজ অনেক উন্নত। একসময় যেখানে মানুষ আসতে ভয় পেতেন, আজ সেখানেই উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ঝাড়গ্রামকে যেমন পৃথক জেলা হিসেবে গঠন করা হয়েছে, তেমনি কালিম্পংকেও নতুন জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘রায়ত’ জমিতে বসবাসকারী আদিবাসীদের দ্রুত জমির পাট্টা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে। পাশাপাশি মাওবাদী হামলায় নিহত পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকারের তরফে চাকরি দেওয়ার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
নারী শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেবেন না। তাদের শিক্ষিত হতে দিন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিন। মেয়েরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এমনকি পাইলটও হতে পারে।”তিনি আরও জানান, রাজ্যে রেশন ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এরপর এনআরসি ও ভাষা রাজনীতির প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, “ভোটার লিস্ট থেকে কারও নাম বাদ যাচ্ছে কি না তা দেখুন। পরিকল্পিতভাবে নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
ভাষা অধিকারের প্রসঙ্গে মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, “নিজের ভাষায় কথা বললে কেন অত্যাচার সহ্য করতে হবে?” তিনি উদাহরণ দেন, মুম্বইয়ে এক মথুয়া যুবককে বাংলা ভাষায় কথা বলার অপরাধে খুন করা হয়েছে। বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে বলেন, “বাংলার মা, বোন, কৃষক — কারোরই সম্মানহানির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।”তিনি আরও বলেন, “বাংলা ভাষা অনেক পুরনো। ১৯১২ সালের ১০ টাকার একটি বাংলা ভাষার নোট আমি আমার ফোনে সংরক্ষণ করে রেখেছি। আমরা আমাদের ভাষা ছাড়ব না।”
চাকরি হারানো প্রার্থীদের প্রসঙ্গেও আশ্বাস দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ফের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে এবং সরকার তাঁদের পাশে রয়েছে।শেষে তিনি কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “আমরা সমস্ত ভাষা জানি, কিন্তু নিজের ভাষা, নিজের অধিকার কখনও ছেড়ে দেব না। ডবল ইঞ্জিন সরকার মনে রাখুক — বাংলার ছাত্রছাত্রী, কৃষক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নেবে না।”