আমাদের ভারত, ২৫ নভেম্বর:
বিশ্বকাপ ফাইনালে দিনকয়েক পার হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল। ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ষষ্ঠবার বিশ্বজয়ী হয়েছে। তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন ভঙের হতাশা নিয়েই ভারতকে ফিরতে হয়েছে। এসব কিছুই এখন পুরনো খবর। কিন্তু ভারতের এই হারের জন্য বাংলাদেশ জুড়ে যে মাত্রাছাড়া এবং দৃষ্টিকটু ভাবে পৈশাচিক উল্লাস দেখা গিয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ এপার বাংলার মানুষ।
সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশের এই মাত্রছাড়া উচ্ছ্বাসকে ভালোভাবে নেয়নি এদেশের বড় অংশের মানুষ। তাই শুধু ক্ষোভ প্রকাশই নয় রীতিমতো বাংলাদেশী পণ্য বয়কটের ডাক উঠেছে।
অনেকে বলেছেন, কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে ভারত কোনও খেলায় হারলেই বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী তরুণদের একটা বড় অংশ পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠছেন। তাদের দল যে বিশ্বকাপ থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে সেটা নিয়ে তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু ভারত পরাজিত হওয়ার পরই তাদের তারা উল্লাসে ফেটে পড়ছে। অথচ ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য পণ্য তারা আমদানি করেন। ভারতের হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা তারা ব্যবহার করে। কলকাতায় এসে মার্কেটিং করেন আর সেই ভারতকেই সব সময় ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন।
তাই এপার বাংলার একটা অংশের মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন। কেউ বইমেলাতে বাংলাদেশের স্টল না দেওয়ার ব্যাপারে। কেউ বলছেন স্টল দিলেও তাতে যেন কেউ না যান। বয়কটের তালিকায় বড় করে যুক্ত হয়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ কোচবিহারের রাস মেলা। একটা বড় অংশের মানুষ চাইছেন কোচবিহারে বাংলাদেশের কোনও স্টল দিতে না দেওয়া হোক। কেউ কেউ বলেছেন, যদি সরকার স্টল দিতে বাধ্য করে তবে সেই স্টলে যেনো কেউ না যান। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে।
তবে এটা যে শুধু সাধারণ মানুষের কথা তা নয়, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে সরব হয়েছেন। শুধু রাসমেলা উৎসব নয়, আলিপুরদুয়ারের ডুয়ার্স উৎসবেও একই ধরনের দাবি উঠেছে। প্রতিবছর রাস মেলায় বাংলাদেশের একাধিক স্টল থাকে যাতে ভিড়ও থাকে প্রচুর।
এই ধরনের মেলায় রাজ্য ও বিভিন্ন দেশের যেমন নেপাল, ভুটান বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। বাংলাদেশের গুড় দই বাংলাদেশের জামদানি শাড়ি ইলিশ কেনার ভিড় হয়। ফলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি পণ্য বয়কট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে।
যদিও শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে কোচবিহার পুরসভার তরফ এই ধরনের পোস্ট না করার অনুরোধ করা হয়েছে। তাদের কথা, এদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে যান আবার বাংলাদেশ থেকেও আসেন। তাই দু’পক্ষের যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেটা দেখা উচিত। সকলকে অনুরোধ করেছে এই ধরনের জনমত না গড়ে তুলতে।
তবে এই ধরনের বয়কটের ডাকে সমর্থন করেছেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক নিখিল রঞ্জন দে। তাঁর দাবি, বাংলাদেশ ভারতের জন্যই স্বাধীনতা পেয়েছে। সেই ভারতের বিরোধিতা করে যে ধরনের বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি আচরণ করে উল্লাস প্রকাশ করা হচ্ছে তা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং খারাপ ইঙ্গিত বহন করে। যারা বয়কট করতে চাইছেন তারা দেশকে ভালোবেসে এই ধরনের কথা বলছেন। তাঁর মতে এতে কোনও খারাপ কিছু নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ কেউ লিখেছেন, কোচবিহারের রাসমেলা যে সমস্ত বাংলাদেশের স্টল দেওয়া হয় তা অবিলম্বে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সবার উপরে দেশ সেই দেশের নামে অপমান! একজন ভারত মাতার সন্তান হয়ে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।
এদিকে পাহাড়ের হোটেলে বাংলাদেশীদের ঘর না দেওয়ার গুজব ছড়িয়েছে। জানা গেছে, বিশ্বকাপে ভারতের হারে বাংলাদেশী সমর্থকদের উল্লাস দেখে দার্জিলিংয়ের কোনো এক হোটেল ব্যবসায়ী সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশীদের রুম না দেওয়ার পোস্ট করেছিলেন। সেই বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বাংলাদেশের পর্যটকদের মধ্যে। যদিও অ্যাসোসিয়েশনগত ভাবে এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার খান্না। তাঁর কথায়, কোনও এক হোটেল মালিক বাংলাদেশীদের ঘর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদি নিয়ে থাকেন তবে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়, সে ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করবে না হোটেল মালিক সংগঠন।

