সাতসকালে বনগাঁর তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বাড়ি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দল

সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৫ জানুয়ারি: শুক্রবার ভোর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক জায়গায় তল্লাশি অভিযান শুরু করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আধিকারিকরা। এর মধ্যে রয়েছে বনগাঁর তৃণমূলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বর্তমান বনগাঁ পৌরসভার ভায়েস চেয়ারম্যান। রাজনৈতিক সূত্রে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে শোনা যায়। যদিও বিধানসভা ভোটের পর টাকা লেনদেন নিয়ে জ্যোতিপ্রিয়ওর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। দল থেকেও দূরত্ব তৈরি হয় শংকর আঢ্যর। কিছুদিন আগেই তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু হাজিরা এড়িয়ে যান এই তৃণমূল নেতা। নিজে যাওয়ার বদলে পাঠিয়ে দেন কিছু নথিপত্র।

নতুন বছর পড়তে না পড়তেই ফের উত্তর ২৪ পরগনায় দুই তৃণমূল নেতার বাড়িতে হানা দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শুক্রবার সকালে ইডির একটি দল প্রথমে উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছোয়। পরে তাঁর বাড়িতেও হানা দেন ইডি আধিকারিকরা। সেই সময় শঙ্কর আঢ্য বাড়িতে ছিলেন না। বেলা ১২টা নাগাদ শঙ্কর আঢ্যকে দেখা যায় তিনি তাঁর বাসভবনে ঢুকছেন। এরপর শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ।

সূত্রের খবর, বনগাঁর শঙ্কর এবং সন্দেশখালির শাহজাহান, দু’জনেই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু)-র ‘ঘনিষ্ঠ’। শুক্রবার কাকভোরে যেভাবে অভিযান শুরু করেছে ইডি, তাতে স্পষ্ট যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তদন্তেই চলছে এই তল্লাশি। এদিন সকালে প্রথমেই বনগাঁয় যাঁর বাড়িতে পৌঁছয় ইডি, তাঁর নাম বিনয় ঘোষ। খোঁজ খবর করতেই জানা যায়, এই ব্যক্তির জামাইয়ের নাম শঙ্কর আঢ্য। বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা এলাকার তৃণমূলের দাপুটে নেতাকে শঙ্কর আঢ্য ওরফে ‘ডাকু’ নামে চেনেন সবাই। তাঁর খোঁজেই এই তল্লাশি বলে সূত্রের খবর। তবে বিনয় ঘোষের বাড়িতে শঙ্কর কিছু নথি লুকিয়ে রেখেছেন কি না তাঁর তল্লাশি চালিয়েছেন ইডি।

সূত্রের খবর, শঙ্করের নামে রয়েছে একাধিক সংস্থা। সেগুলিই এবার চলে এসেছে ইডি-র নজরে। শঙ্কর এবং তাঁর পরিবার একাধিক বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলেও খবর রয়েছে ইডি-র কাছে। অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছ বলেও সূত্রের খবর। শঙ্করের স্ত্রী, ছেলে এবং একাধিক আত্মীয় এই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন বলেও জানা যায়। বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসার আড়ালে কি কোনও আর্থিক বেনিয়ম ঘটেছে? সেই খোঁজই চালাচ্ছে ইডি। তবে এই আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে রেশন বা শিক্ষা দুর্নীতির যোগ আছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

উল্লেখ্য, প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য বর্তমান বনগাঁ পৌরসভার ভায়েস চেয়ারম্যান। রাজনীতির সূত্রে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে তাঁদের বিশেষ ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিছুদিন আগেই তাঁকে তলব করেছিল ইডি। কিন্তু হাজিরা এড়িয়ে যান তৃণমূল নেতা। নিজে যাওয়ার বদলে পাঠিয়ে দেন কিছু নথিপত্র। একসময় প্রবল দাপট থাকলেও ২০২১-এ বনগাঁ বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল হেরে যাওয়ার দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল শঙ্কর আঢ্যকে। এরপর তিনি গত বছর আবার প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন। জেলার অ্যাডভাইজরি কমিটিতে তাঁকে জায়গা দেয় তৃণমূল। সূত্রের খবর, বালুর হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ করেন শঙ্কর। ২০০৫ সালে প্রথম বনগাঁ পুরসভার কাউন্সিলর হন। পরে বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রধান হন। শঙ্করের স্ত্রী-ও পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন।

ইডি সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে, রেশন দুর্নীতি মামলায় এই শঙ্কর আঢ্যের যোগ থাকলেও থাকতে পারে। তা খতিয়ে দেখতেই তৃণমূল নেতার বাড়িতে ইডি হানা দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *