সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডলকে গ্রেফতার করল সিবিআই। দুর্নীতি কাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার সকালেই নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠানো হয়েছিল চন্দন মণ্ডলকে। সেখানেই জিজ্ঞাসাবাদের পর সন্তোষজনক উত্তর না পাওযায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই আধিকারিকরা তাকে গ্রেফতার করেছে। এদিনই তাকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে চার দিন সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, চন্দন ওরফে রঞ্জন মণ্ডল এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। এক সময় চাকরির জন্য তার বাড়িতে প্রচুর বেকার যুবক যুবতীদের ভিড় দেখা যেত। তিনি শাসক দলের কোনো নেতা- মন্ত্রীদের সেই ভাবে পাত্তা দিতেন না। তার হাত ধরে প্রচুর ছেলে মেয়েদের চাকরি হয়েছে। আগেই জানাগিয়েছিল, চন্দন ওরফে রঞ্জনের সঙ্গে পার্থ চট্টপাধ্যায়ের পারিবারিক সম্পর্ক আছে। সেই জোরে তিনি তার বিশাল বাড়িতেই সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে আগে অনুমতি নিয়ে তবেই দেখা করতে হতো। এলাকার বাসিন্দারা যদিও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেননি।
বছর খানেক আগে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন ‘সৎ রঞ্জন’ নামে একটি ভিডিয়ো ইউটিউবে প্রকাশ করেছিলেন। ওই ভিডিয়োয় তিনি দাবি করেছিলেন, উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জনৈক রঞ্জন টাকা নিয়ে বহু লোককে স্কুলের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে ওই সময় রঞ্জনের আসল নাম প্রকাশ্যে আনেননি উপেন বিশ্বাস। পরে অবশ্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানিতে তা স্বীকার করে নেন তিনি। এর পরেই উচ্চ আদালতের নির্দেশে চন্দনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তে নামে সিবিআই। হাইকোর্ট জানায়, প্রয়োজনে চন্দনকে নিজেদের হেফাজতেও নিতে পারেন তদন্তকারীরা। তার ভিত্তিতেই চন্দনের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়। মামলাকারীকেও তদন্তকারীরা ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
টাকা নিয়ে স্কুলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘কারিগর’ বাগদার চন্দনের বাড়িতে গত জুলাই মাসে হানা দিয়েছিল সিবিআই। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস-কথিত ‘রঞ্জন’ই যে আসলে চন্দন মণ্ডল, তা কলকাতা
হাইকোর্টে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রকাশ্যে এসেছিল আগেই। তার পরেও কেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চন্দন ওরফে ‘রঞ্জন’-এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল।
উপেন তাঁর অভিযোগে জানিয়েছিলেন, টাকার বিনিময়ে বহু চাকরি প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন রঞ্জন ওরফে চন্দন। তবে চাকরি পাইয়ে দিতে না পারলে তিনি নাকি সুদ-সহ অর্থ ফিরিয়ে দিতেন। সে কারণে উপেন এক জায়গায় চন্দনকে ‘সৎ চন্দন’ বলেও অভিহিত করেন। চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা বাগদা থেকে কলকাতায় প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিতেন চন্দন, এমনই দাবি করেছিলেন উপেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরি প্রার্থীদের নেওয়া টাকা বিভিন্ন হাত ঘুরে কাদের কাছে পৌঁছত? রঞ্জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে তা খতিয়ে দেখতে পারে সিবিআই।