পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৮ জুলাই: রাজ্যে নজিরবিহীন ঘটনা! জেলাপরিষদের একটি কেন্দ্রেই প্রায় এগারো হাজার ব্যালটের গরমিল। ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো হুলুস্থুল ব্যাপার দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলিতে। হিসাব গরমিল জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রিপোর্টেও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ১৩ নম্বর আসনেই ঘটেছে এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনা। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া রিপোর্টের সাথে জেলা প্রশাসনের রিপোর্টের মিল না থাকায় ধন্দে পড়েছেন শাসক থেকে বিরোধী সকলেই। যা নিয়েই আইনের দ্বারস্থ হবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাম ও বিজেপি প্রার্থীরা।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের ১৩ নম্বর আসনটির ফলাফল সামনে আসতেই রীতিমতো বিতর্কে পড়েছে জেলা প্রশাসন ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসনের দেওয়া রিপোর্টের সাথে কোনও মিল নেই রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলের। যাকে ঘিরেই তুমুল হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সীমান্ত অধ্যুষিত হিলি ব্লকে। শুধু তাই নয়, এই জেলাপরিষদ আসনে প্রায় ১১ হাজার ব্যালটের গরমিলের ঘটনা সামনে এসেছে। যা রাজ্যে নজিরবিহীন ঘটনা বলেই মনে করছেন অনেকে। জেলা প্রশাসন সুত্রের খবর অনুযায়ী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের এই ১৩ নম্বর আসনটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৮০ জন। যার মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ভোট দিয়েছেন ২৪ হাজার ৭৮১ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে সেই সংখ্যাটি সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৪৪০ জনে। কিন্তু অবাক করা ঘটনাটি ঘটেছে জেলাপরিষদের ক্ষেত্রে। প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যেখানে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৩ হাজার ৯৩৯ জন ভোটার। অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির তুলনায় প্রায় ১১ হাজার ভোটার কম ভোট দিয়েছে জেলা পরিষদে। যা নিয়েই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ঘটনা রাজ্যে নজিরবিহীন। কারচুপি করতে গিয়েই শাসকদলের নেতারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা। তাদের বক্তব্য, বিরোধী দলের ব্যালট ফেলে দেওয়া হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কৌশিক মাহাত ওরফে ডাকু ঠিক কত ভোটে জয়ী হয়েছেন তা নিয়েও ধন্দে পড়েছেন খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফল বলছে ১৩ নম্বর জেলাপরিষদ আসনের তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হয়েছে তিন হাজার তিন ভোটে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের তথ্য অন্য কথা বলছে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কৌশিক মাহাত ওরফে ডাকু জয়ী হয়েছেন ১৮৪০ ভোটে। অর্থাৎ সেখানেও গরমিল প্রায় ১২০০ ভোটের। যে ফলাফল ঘিরেই কার্যত বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা প্রশাসন। তাদের অভিযোগ, পুরো গণনা প্রক্রিয়াটিই গোজামিল ভাবে চলেছে। আর যে কারণেই কারো রেজাল্টের সাথে কারো রেজাল্টের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিরোধীদের জয় আটকাতে প্রায় ১১ হাজার ব্যালট পেপার ওই কেন্দ্র থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। যা নিয়েই আইনের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা।
যদিও তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী কৌশিক মাহাতো ওরফে ডাকু বলেন, তিন হাজার ভোটে তিনি জয়ী হয়েছেন। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না।
ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শিবতোষ চ্যাটার্জি বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির থেকে প্রায় ১১ হাজার ভোট কম পড়েছে জেলাপরিষদে। এটা কারচুপি ও দুর্নীতি ছাড়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে আদালতের শরনাপন্ন হচ্ছেন তিনি।
বিজেপি প্রার্থী বাপী সরকার বলেন, ১৩ নম্বর আসনে মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেয়নি। প্রশাসন আর তৃণমূল যৌথভাবে গায়ের জোরে সেখানে বিজেপিকে হারিয়েছে। রেজাল্ট দেখেই মানুষ বুঝতে পারছে সেখানে কি ধরনের কারচুপি হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, কারচুপি করলে কীভাবে রেজাল্ট মিলবে? গোজামিল দেওয়া ভোটের রেজাল্ট। আর সেই কারণে কারো রেজাল্টের সাথে কারো রেজাল্ট মিলছে না।