আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১৯ জুলাই: রাজ্য তথা উত্তরবঙ্গে অন্যতম পরিচিত বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের সাফল্যে আর এক নতুন পালক। ন্যাশানাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি, ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া যৌথভাবে করা জঙ্গলে পায়ে হেঁটে পেট্রোলিং, জঙ্গল রক্ষায় বনকর্মীদের অংশদারির উপর সার্ভেতে দেশের ৩৫টি ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে বক্সা বাঘবন অষ্টম স্থান অধিকার করেছে। সার্ভের রিপোর্ট নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবার পর উচ্ছ্বাসিত বক্সার বনকর্মী থেকে বনাধিকারিকরা। বক্সার নতুন সাফল্যের প্রশংসা করেছেন খোদ বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
রাজ্য জুড়ে এখন অরন্য সপ্তাহ পালন করা হচ্ছে। আর তার মাঝেই একটানা জঙ্গল রক্ষা, ফুট পেট্রোলিং সহ বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে জঙ্গল রক্ষা করে গোটা দেশের মধ্যে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প। এমনকি লকডাউন পরিস্থিতিতেও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের বনকর্মীরা ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ১লক্ষ ১৬ হাজার বর্গকিমি জঙ্গল পায়ে হেঁটে পেট্রোলিং করেছেন। পাশাপাশি মোটর গাড়ি, ৫টি হাতি, বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরদের নিয়েও চলেছে গভীর জঙ্গলে নজরদারি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, নিচুতলার বনকর্মীদের সাথে অনান্য আধিকারিক এবং ডিএফডি পদমর্যাদার আধিকারিকরাও গত একবছর জঙ্গলে পেট্রোলিং-এ অংশ নিয়েছেন।বনদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১বছর ধরে ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি, ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া যৌথভাবে সার্ভে শুরু করেছিল দেশের ৩৫টি ব্যাঘ্র প্রকল্পে। সার্ভের ফলাফল থেকে উঠে এসেছে সাফল্যের তথ্য।ব ক্সা বাঘ বনের নতুন সাফল্যের প্রশংসা করেছেন বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও। বনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, “খুবই বড় সাফল্য। আমাদের বনকর্মীরা দিনরাত জঙ্গল রক্ষার কাজ করছেন। এই তথ্য তা অনেকটাই প্রমান করে। তবে আমরা আত্ম্যসন্তুষ্ট হতে চাইনা।আর এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।”
উল্লেখ্য, ৭৬২ বর্গ কিমির বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে চোরাকারবারিদের দাপট রয়েছে। উত্তর-পূর্বের দুষ্কৃতিদের নজর থাকে সারাবছর। লকডাউন পরিস্থিতিতে জঙ্গল রক্ষা আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বক্সার ভৌগোলিক চরিত্রও যথেষ্ট জটিল। জানা গেছে, বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব দিকে অসম সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। দিনরাত চলছে পেট্রোলিং। নজর রাখা হয় ১৪টি স্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার থেকে। অসম সীমান্ত বরাবর নামানো হয়েছে ৩টি প্রশিক্ষিত হাতি, আছে প্রশিক্ষিত ট্রাকার ডগ। তৈরী করা হয়েছে ৫টি রিভারক্যাম্প।
পাশাপাশি রায়ডাক, সঙ্কোষ অসম সীমান্ত লাগোয়া দুই নদীতে চলছে রিভার পেট্রোলিং। দুটি স্পর্শকাতর বিট এলাকায় দুটি স্পেশাল ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। লক্ষ্য গাছ কাটা রোখা। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের পূর্ব বিভাগের ডিএফডি পি হরিশ বলেন, আমরা সকলেই পেট্রোলিং-এ অংশ নিচ্ছি। গত দুমাসে যথেষ্ট সফল বনকর্মীরা। উদ্ধার করা হয়েছে মূল্যবান কাঠ, আটক করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি,ধরা পরেছে বেশ কিছু অভিযুক্ত। গাড়ি ধরে ধরে চলছে চেকিং।”
পশ্চিম ডিভিশনের ডিএফডি প্রবীণ কাশওয়ান বলেন, “জঙ্গলে বনকর্মীরা কতটা প্রট্রোলিং করছেন তা জানতে আমরা বিশেষ মোবাইল অ্যাপ “এম স্ট্রাইপ” ব্যবহার করছি। স্বাভাবিকভাবেই বনকর্মীরা কতটা প্রট্রোলিং করছেন তাও রেকর্ড হয়ে থাকছে।” ফিল্ড ডিরেক্টর বুদ্ধরাজ শেওয়া বলেন,“জঙ্গল রক্ষাই আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বের।বনকর্মীদের শুভেচ্ছা।”
জানা গেছে, এম স্ট্রাইপ অ্যাপ নির্ভর পেট্রোলিং নিয়ে লকডাউন পরিস্থিতিতে বনকর্মীরা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এতে জঙ্গলের কোর, বাফার এলাকায় কতটা পেট্রোলিং হয়েছে, কিকি বন্যপ্রাণী দেখা যাচ্ছে, কোন কোন এলাকা স্পর্শকাতর যাবতীয় তথ্য ধরে রাখা যায়। পাশাপাশি ডিএফডি পদমর্যাদার আধিকারিকরা দিনে রাতে ফুট পেট্রোলিং এ অংশ নেওয়ায় বনকর্মীদের আত্নবিশ্বাস অনেকটা বেরে গিয়েছে গত এক বছরে।