অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, কলকাতা, ৭ জুলাই: বেসরকারি বাসের জন্য ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পথ কর মকুব। বুধবার বাজেটের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে বাসমালিকরা পথ কর কমানোর দাবি করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের ঘোষণায় তাঁরা কতটা খুশি? সাড়ে চার দশকের ওপর বাসশিল্পের সঙ্গে যুক্ত জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বুধবার তিনি এই প্রতিবেদককে প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, “আমরা আজ সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম রাজ্য সরকার রাজ্যের বেসরকারি বাসের পথ কর আগামী ৩১.১২.২০২১ পর্যন্ত মকুব করল। এটা এই মুহূর্তে খুব একটা সমাধান হবে বলে মনে হয় না। সার্বিক সমাধানের জন্য ভাড়া বৃদ্ধি এক মাত্র রাস্তা। দৈনিক কলকাতার একটি বাসের মাত্র ৩২ টাকা কমবে। আর জেলার বাসের ৪০ টাকা কমবে। এটা ২০২০–তেও হয়েছিল।“
তপনবাবু জানান, “পশ্চিমবাংলার গণপরিবহনের পরিবর্তন একে একে কী হচ্ছে দেখুন। ১৯৭৫-এ পরিবহনে আমার আগমন। বাস ভাড়া ১০ পয়সা, ডিজেল ৮০ পয়সা প্রতি লিটার, বাস স্যাসি ৯৯,৪৪১ টাকা, বাস বডি ১৮.০০০-২১,০০০ টাকা। ১৯৭৫–এ বাস ভাড়া বেড়ে হলো ১০ পয়সা থেকে ২০ পয়সা।
কংগ্রেস সরকার পরিবর্তন হলো। ১৯৮০ শেষের দিকে কলকাতায় এল অটো। প্রথমে মিটার, তার পর কোনও আইনে মিটার তুলে দেওয়া হল, কাদের জন্য?
তপনবাবু জানান, “আজ জনগণ হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে, দেশের কোনও রাজ্যে এই ভাবে অটো চলে না। প্রবুদ্ধ নাথ রায় তাঁর রিপোর্টে অন্য কথা বলেছিলেন। কোথায় গেলো সেই রিপোর্ট? আপনারা অনেকেই অবগত আছেন, সত্তরের দশকের শেষের দিকে তৎকালীন সরকার বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় এই শহরে ডিলাক্স নামে কিছু বিলাসবহুল বাস নামিয়েছিল।
পরবর্তীকালে তার নাম হলো স্পেশাল (এস)। তার পর এলো মিডি। এই ভাবে বেশি ভাড়া নেওয়ার অজুহাতে কেবলমাত্র নামের পরিবর্তন। এই ভাবে কোনও সময় ‘ই’ বা অন্য নাম দিয়ে সাধারণ বাসের মত যাত্রী বহন করেছে। এর পরও কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি। মাত্র কিছু বাসের জন্য। এই রাজ্যে ৮৫ শতাংশ যাত্রী বহন করে বেসরকারি বাস। দুর্ভাগ্য বেসরকারি বাস মালিকদের। কোনও গৌরি সেন নেই। গণপরিবহনকে বরাবরই অন্য চোখে দেখা হয়।
তপনবাবু বলেন, “আমি দাবি করছি যে ভাবে বাস ও অন্য যানের ভাড়া ঘোষণা করা হয়, ঠিক সেই ভাবে অটোর ভাড়া ঘোষণা হয় না কেন? অটোর ভাড়া কে ঘোষণা করে? অটো তো আর অন্য গ্রহ থেকে আসেনি? আমি মনে করি মোটর ভেহিকেলস আইনুসারে যে গাড়ি যেভাবে চলার সেই ভাবেই চলা উচিৎ। এর ফলে গণপরিবহনের মতো একটি শিল্প ধংসের পথে যেতে চলছে। কৃষির পর বেশি মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এক দিকে কেন্দ্রীয় সরকারের দফায় দফায় ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাঙ্ক ইএমআই, বিমা- সহ আনুসঙ্গিক অন্যান্য ব্যাপারে অনিহা। অন্য দিকে রাজ্য সরকার ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে যুক্তি মানছে না। এই দুই চাপে বেসরকারি বাস আজ কোমায় চলে গেছে। আশা করবো উভয় সরকার সহানুভূতিশীল হবে।“
বাসমালিকরা তোপ দেগেছেন জ্বালানির দামবৃদ্ধি নিয়েও। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পেট্রোপণ্য থেকে মোটা টাকা কর আদায় করেছে কেন্দ্র। গত কয়েক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বেড়েছে পেট্রল, ডিজেলের দাম। এরপরই তাঁর কটাক্ষ, শুধু মন্ত্রিসভা রদবদল করলেই হবে? জ্বালানির দাম কমানোর জন্য ব্যবস্থাও নেওয়া উচিৎ।”
মুখ্যমন্ত্রী বুধবার বলেন, “গত মে মাস থেকে ৮ বার পেট্রোপণ্যের দাম বেড়েছে। শুধুমাত্র জুন মাসেই মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৬ বার। আর গত এক সপ্তাহে ৪ বার দাম বেড়েছে পেট্রোপণ্যের। সবমিলিয়ে আমজনতার নাভিশ্বাস দশা। পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধি মানুষের সহ্যক্ষমতা ছাড়িয়েছে।“