মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে ঐতিহাসিক বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে মেতে উঠেছে জঙ্গলমহলের গোপীবল্লভপুর

অমরজিৎ দে, ঝাড়গ্রাম, ১৪ জানুয়ারি: আজ বুধবার জঙ্গলমহলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে মেতে উঠেছে জঙ্গলমহলের গোপীবল্লভপুর। কয়েকশো মানুষ ভিড় জমান গোপীবল্লভপুরের রাধা গোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরের সামনে বুলবুলি লড়াই দেখতে। এই লড়াইয়ে যে পাখিটি হারবে সেই পাখির কাটা যাবে ঝুটি, আর বিজয়ী পাখির মালিক পাবে পুরস্কার।

যারা এখানে পাখির লড়াই করতে আসেন তারা সকাল থেকেই পাখিটিকে না খাইয়ে রাখেন। তারপর দুপুরে যখন এই লড়াই শুরু হয় তখন এক টুকরো কলা লড়াই করে নিতে হয়। আর এই খাদ্যের অধিকারের জন্য লড়াই দুটি বুলবুল পাখির। আর এই লড়াই দেখতেই শুধু গোপীবল্লবপুর বাসী ও পাশের গ্রামগুলিই নয় পাশের রাজ্য ওড়িষা, ঝাড়খণ্ড থেকে আসেন অসংখ্য মানুষ।

কয়েকশো বছরের ঐতিহাসিক বুলবুলির লড়াই গোপীবল্লভপুরের সংস্কৃতি বলেই পরিচিত। গত দেড় থেকে দুই মাস ধরে এর প্রস্তুতি চলে পাখি ধরা থেকে শুরু করে পাখি বেঁধে রেখে লড়াইয়ের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া পুরোটাই থাকে এই প্রস্তুতিপর্বে। গোপীবল্লভপুরেও পাখির লড়াই হয় দুটি পাড়া বাজারসাই ও দক্ষিণ সাইয়ের মধ্যে। সাই অর্থাৎ পাড়া। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ফুটবল ম্যাচ ঘিরে যে ধরনের উন্মাদনা থাকে গোপীবল্লভপুরেও দক্ষিণ সাই ও বাজার সাইয়ের বুলবুল পাখির হাউসিদের মধ্যে সেই উন্মাদনা দেখা যায়। টিমের অনেকেই যোগদান করেন তাদের হাউসি বলা হয়।

এদিন মকর স্নান করে আসার পর বারোটা থেকে শুরু হয় লড়াই চলে বিকেল পর্যন্ত। আর এই লড়াই কোন কোন পাখির কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয় আবার কোনোটা দীর্ঘসময়ের জন্য হয়। এখানে প্রতিবছর ৯০ থেকে ১০০ টি পাখির লড়াই হয়।আর যে পাখি হেরে যায় সেই পাখির মাথায় ঝুঁটি কেটে বোঝানো হয় যে সে বিজিত। আর যে পাখিটি সবথেকে বেশি পাখির সাথে লড়াই করে সেই পাখি মালিককে দেওয়া হয় পুরস্কার। আর সব শেষে যে পাড়ার পাখি সব থেকে বেশি লড়াই করে সেই পাড়াকেই বিজয়ী বলে ঘোষণা করা হয়। আর আজকের এই লড়াই শেষ হয়ে যাওয়ার পর দু তিন দিন পরে পাখি গুলিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *