সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৮ ফেব্রুয়ারি: জমি-জায়গা নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন হন বেলেঘাটার সুরেন সরকার রোডের বাসিন্দা বুলু সাহা এবং তার একরত্তি সন্তান। শুধু খুন করেই ক্ষান্ত থাকেনি অভিযুক্ত, বাচ্চাটিকে কুচি কুচি করে কেটে বাজারের ব্যাগে ভরে ফেলে দেয়। নৃশংসভাবে মা ও শিশু খুনের ঘটনায় শুক্রবার দুজনকে দোষী সাব্যস্ত করে এক অপরাধীকে দোষী এক অপরাধীকে ফাঁসির সাজা দিলেন শিয়ালদা আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি, এই ঘটনায় সাহায্য করার অপরাধে অপর অপরাধীকেও দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
সরকারি কৌঁসুলি আবুবক্কর ঢালী জানান, ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বরে উল্টোডাঙায় খালের কাছে একটি বাজারের ব্যাগের মধ্যে উদ্ধার হয় একটি শিশুর টুকরো টুকরো দেহ। এর ঠিক একদিন পরে ডানকুনি টোলপ্লাজার কাছে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয় এক মহিলার মৃতদেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিজের এক বছরের ভাইপো ইন্দ্রজিৎ সাহা এবং বৌদি বুলা সাহাকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল বেলেঘাটার সুরেন সরকার রোডের বাসিন্দা সত্য সাহা ও তার স্ত্রী নন্দিতা সাহা।
তিনি আরও জানান, দাদা বিদ্যুৎ সাহা বাড়িতে না থাকার সুযোগে ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সত্য সাহা এবং নন্দিতা সাহা প্রথমে বৌদি বুলু সাহাকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে। এরপর এক বছরের ভাইপো ইন্দ্রজিৎ সাহাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে তারা। বুলুর দেহ পাওয়া যায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এবং উল্টোডাঙায় খালের কাছ থেকে শিশুটির দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ ১৬ ডিসেম্বর নন্দিতাকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। পরে ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় পলাতক সত্য সাহা। তদন্তভার বিধাননগর পুলিশের হাত থেকে যায় সিআইডির হাতে।
প্রায় ১২ বছর মামলার শুনানি চলে শিয়ালদা আদালতে। মামলায় বিশেষ সরকারি আইনজীবী আবুবক্কর ঢালী অপরাধীদের ফাঁসির দাবি করেন আদালতে। তাঁর যুক্তি, অসহায় মা এবং শিশুকে একা পেয়ে যেরকম নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে তা বিরলতম। এই যুক্তি দিয়ে তিনি আদালতের কাছে অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ ফাঁসির দাবি করেন। পাশাপাশি, বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এই খুনের ঘটনার উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ আদালতের কাছে পেশ করেন। মামলায় সাক্ষ্য দেন ৪৬ জন। সমস্ত সাক্ষ্য ও প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নৃশংস ঘটনার অপরাধীর ফাঁসির সাজা দেয় আদালত।