আমাদের ভারত, ১৮ অক্টোবর: “স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় শারীরিক রোগ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠাও অত্যন্ত জরুরি। এবিষয়ে মনস্তাত্বিক পরামর্শদানের মাধ্যমে ভয় থেকে মুক্তি পেতে, নিজের ব্যক্তিত্ত্ব পুনরুদ্ধার করতে ও মানসিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করে।” শনিবার এ কথা জানান কন্সাল্টেন্ট সাইকোলজিস্ট অনুশীলা দত্ত।
আমাদের দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ৩০ শতাংশই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত। এবছরে (২০২৫) দেশে নতুন করে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ২,৩০,০০০। এর মধ্যে এরাজ্যে সংখ্যাটা ১৫,০০০ এরও বেশি। সবথেকে চিন্তার বিষয় হল, এঁদের মধ্যে বেশিরভাগের ক্যান্সার ধরা পড়েছে রোগ জটিল হয়ে যাওয়ার পর।
বিষয়টি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি শিবির করে ডিসান হাসপাতালের ‘ব্রেস্ট ক্যান্সার স্পেশালিটি ক্লিনিক’। সাংবাদিক সম্মেলনে কন্সাল্টেন্ট মেডিক্যাল অংকোলজিস্ট ডা: শ্রেয়া মল্লিক বলেন যে, ‘টারগেটেড থেরাপি’, ‘প্রিসিসান কেমোথেরাপি’ ও অস্ত্রোপচারের পরে অনেক মহিলা ক্যান্সার রোগীই অস্ত্রোপচার-পরবর্তী রেডিও থেরাপি সহ প্রথাগত বক্ষ অস্ত্রোপচারকে নিরাপদ ও কার্যকরী চিকিৎসা হিসাবে বেছে নেন।
বিশেষজ্ঞ ডা: জ্যোতি গুপ্ত জানান, ‘একই সঙ্গে ক্যান্সারকে নির্মূল করে স্তনের স্বাভাবিকতা ধরে রাখতে আমরা ‘অ্যাডভান্সড ইমেজিং’ ও ‘সার্জিক্যাল প্ল্যানিং’-এর উপরে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। একজন মহিলা ক্যান্সার রোগীকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে সুস্থ, সক্ষম ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।
হাসপাতালের অপর একজন কন্সাল্টেন্ট ক্যান্সার সার্জেন ডা: আমন প্রকাশ বলেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ের স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার-পরবর্তী রেডিও থেরাপি সহ প্রথাগত স্তন অস্ত্রোপচারে সাফল্যের হার ‘ম্যাস্টেক্টটমি’ বা সম্পূর্ণ স্তন বাদ দিয়ে করা চিকিৎসার সমান। শুধু ক্যান্সার থেকে মুক্তিই নয়, একজন মহিলার স্বাভাবিকতা ও শারীরিক গঠন বজায় রাখতে তাঁরা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে থাকেন।
স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার মনোবিজ্ঞানগত দিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে পরিশেষে হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সজল দত্ত বলেন, তাঁরা চিকিৎসা বিজ্ঞানকে মানবিকতা ও সহানুভূতির সঙ্গে ব্যবহার করে থাকেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তাঁদের নতুন বক্ষ ক্যান্সার ক্লিনিকও সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখে মহিলাদের চিকিৎসার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, এদেশে ক্যান্সার রোগীদের গড় বয়স পাশ্চাত্যের থেকে প্রায় দশ বছর কম। এঁদের বেশির ভাগেরই তাঁদের সাংসারিক বা কর্মজীবনে থাকতেই ক্যান্সার ধরা পড়ে। ওদেশে ৬০ থেকে ৭৪ বছরে স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত হবার ঘটনা বেশি। সেই তুলনায় আমাদের দেশে ৫০ বছরের নিচেই স্তন ক্যান্সার হচ্ছে। এজন্য দরকার সচেতনতা। অক্টোবর মাসে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস।
১৯৮৫ সালে বিশ্বজুড়ে মহিলাদের মধ্যে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে ‘আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি’ ও ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকা’-র উদ্যোগে সচেতনতা নিয়ে কাজ শুরু হয়। বিষয়টিকে মনে রেখে ডিশান হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্যানসার স্পেশালিটি ক্লিনিক চালু হল।
আক্রান্ত স্তনকে যতদূর সম্ভব অক্ষুন্ন রেখে আধুনিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার এই ক্লিনিকের অন্যতম লক্ষ্য। এই পদ্ধতির অস্ত্রোপচারে রোগীর ক্যান্সার মুক্তির সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসে। আপাতত প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবারে ডিসান হাসপাতালে এই ক্লিনিক চালু থাকবে। এর জন্য ডিসান হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত টিউমার বোর্ড প্রত্যেক ক্যান্সার রোগীর জন্য অবস্থা পর্যালোচনা করে পৃথক চিকিৎসা পরিকল্পনা তৈরি করে।

