অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৪ জুন: আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের নির্দেশে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। প্রকাশ্যে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ক্ষুব্ধ একদল সদ্য প্রাক্তন উপাচার্য সাংবাদিক সম্মেলন করে আচার্যর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন। অন্যদিকে, রাজভবনে ১০ অস্থায়ী উপাচার্যকে নিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন আচার্য রাজ্যপাল। সপ্তাহান্তের পর মূলত সোমবার থেকে শুরু হবে তাঁদের দায়িত্ব পালন।
শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন, তিনি আচার্য মনোনীত ১০ উপাচার্যকে মানবেন না। তাঁরা পদত্যাগ করুন। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে উপাচার্যদের ঠিক কিভাবে, কতটা চাপে ফেলতে পারে রাজ্য? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়া অস্থায়ী উপাচার্য অমিতাভ দত্ত এই প্রতিবেদককে বলেন, “দেখুন আচার্য আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী প্রতিবাদ করেছেন। আমি কী করব? এটা তো ওঁদের ব্যাপার। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আর চাপে ফেললে? কী হয়, দেখা যাক!”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত জানিয়েছেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের সান্নিধ্যে নেই। শুধুমাত্র পড়ুয়াদের কথাই সর্বক্ষণ ভাবেন। নিজেকে ‘আদ্যান্ত শিক্ষাবিদ’ হিসেবে দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, “সম্ভবত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র মোস্ট প্রফেসর আমি। এর আগে ডিন অব ফ্যাকাল্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।’ একদিন হঠাৎ করেই রাজ্যপালের দফতর থেকে তাঁর কাছে ফোন যায়। ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। তখনও তিনি এসব কিছুই জানতেন না। রাজ্যপালের অফিস থেকে ফোন পাওয়ার পর কেন তিনি সেখানে গেলেন, সেই কথাও জানালেন। বললেন, ‘যে কেউ ডাকলে তো চলে যাব না নিশ্চয়ই। রাজ্যপাল ডেকেছেন মানে আচার্য ডেকেছেন। আমাদের যা কিছু নিয়োগ হয়, সব আচার্যই করেন। এমন অবস্থায় রাজ্যপাল ডেকেছেন। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়েও একটি বিরাট ভ্যাকুয়াম তৈরি হয়েছিল। পড়ুয়াদের ক্ষতি হচ্ছিল। কাজের ক্ষতি হচ্ছিল। সেই কারণে যখন তিনি ডাকেন, আমি চলে যাই।’
তাঁর বক্তব্য, এই পরিস্থিতি নতুন নয়। এর শিকড় অনেকদিনের পুরনো। বলছেন, ‘এটা বাম জমানা থেকে শুরু হয়েছিল। যেন সব নিয়োগ রাজনৈতিক হতে হবে। এর থেকেই শুরু হয়েছে এই বিষয়টি। একটু ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভাবলে… একজন মাত্র রেজিস্ট্রার, এতদিন কোনও উপাচার্য ছিলেন না। এত বড় একটা বিশ্ববিদ্যালয়, সেই কর্মকাণ্ড থেমে যাবে রাজনৈতিক যুদ্ধের জন্য? এর বীজ আজকের নয়, বহুদিনের। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে কখনও কোনও কাজ হলে, তা কখনও ছাত্রছাত্রীদের জন্য হয় না।’
১০ জন নবনিযুক্ত উপাচার্য শুক্রবার রাজভবনে একটি কনক্লেভে বসেন। আচার্য তথা রাজ্যপালকে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভারতের মধ্যে সেরা হিসেবে তুলে ধরার জন্য তাঁদের সংকল্পের কথা জানান। সেই ‘ক্যালকাটা কমিটমেন্ট’ বা কলকাতা প্রতিশ্রুতিতে ১৫ দফা কর্মসূচির কথা প্রস্তাবিত হয়েছে। রাজভবনের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাকে ভারতের মধ্যে সেরা স্তরে নিয়ে আসার ভাবনার কথা বলা হয়েছে ওই প্রস্তাবে। এর পাশাপাশি এই সংকল্প বাস্তবিক ক্ষেত্রে যাতে পরিপূর্ণতা পায়, সেই কথাও বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উদ্বেগ, দ্বিতীয় উদ্বেগ এবং তৃতীয় উদ্বেগ… পুরোটাই যে পড়ুয়াকেন্দ্রিক সেই বিষয়টিও স্পষ্ট করা হয়েছে সেখানে। একইসঙ্গে দলগত ও সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে দূরে রাখার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য যাতে একটি অনুকূল পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি তৈরি করা যায়, সেই বিষয়টির উপর আরও নজর দিতে বলা হয়েছে।
অস্থায়ী উপাচার্য এবং প্রত্যাশী শিক্ষাবিদদের মধ্যেও তৈরি হয়েছে একটা স্পষ্ট বিভাজন। জল এখন কোনদিকে গড়ায়, সেটাই দেখার।