আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ২ সেপ্টেম্বর: অনুব্রত মণ্ডল কোনোদিন ভাবতে পারেননি যে তাঁর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটবে! আজ সেই ঘটনার মুখোমুখি হতে হল তাঁকে! সামান্য এক বুথ সভাপতি তাঁর চোখে চোখ রেখে জবাব দিলেন। বীরভূমের মুকুটহীন তৃণমূলের সম্রাটের বক্তব্যের বিরোধিতা করে হাততালিও কুড়োলেন। বিব্রত অনুব্রত মণ্ডল তাঁকে বুথ সভাপতি থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু দলের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ্যে চলে আসে। তাঁর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে অনেকেই সভা ছেড়ে বেরিয়ে যান।
“বাম আমলে রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা যেত। আমাদের আমলে সাইকেলটুকুও চলে না। বহু গ্রামের রাস্তায় হাঁটাচলা করা যায় না”। বুধবার দুপুরে সিউড়ি ২ নম্বর ব্লক বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের চোখে চোখ রেখে এমনই উত্তর দিলেন এক বুথ সভাপতি। এনিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। দলের জেলা সভাপতির চোখরাঙানিতে ক্ষুব্ধ হয়ে সভা থেকে বেড়িয়ে যান বুথের কর্মীরা। পরে দলের জেলা সহ সভাপতি অভিজিৎ সিংহ মধ্যস্থতা করেন।

নির্বাচনের আগে টিম পিকের নির্দেশে ব্লকে ব্লকে বুথ ভিত্তিক কর্মী সম্মেলন করতে শুরু করেন অনুব্রত মণ্ডল। সম্মেলনে অঞ্চল এবং বুথ ধরে ধরে কিভাবে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কিভাবে ভোট বাক্স পর্যন্ত নিয়ে যাবেন তার পরামর্শ দেন অনুব্রত। অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদের হাতে মাইক ধরিয়ে শিক্ষকের মতো প্রশ্ন ধরতে শুরু করেন। কোথাও কেন ভোট কমলো কিংবা কোথায় কি সমস্যা রয়েছে তা নিয়ে বুথ ধরে ধরে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলে। দমদমা অঞ্চলের মাঝিগ্রাম বুথের সভাপতি গণেশ রায়কে অনুব্রত মণ্ডল জানতে চান লোকসভায় দুই ভোটে হারলাম কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের ভরসা আছে? উত্তরে বুথ সভাপতি গণেশ রায় বলেন, “ভরসা ছিল। কিন্তু এখন ভরসা হারিয়ে ফেলেছে। কারণ মাঝিগ্রাম থেকে হাতোড়া যাওয়ার গ্রামের রাস্তা কাঁচা। বর্ষায় যাতায়াত করা যায় না। পায়খানা তৈরি হলেও রিং বসেনি, দরজা লাগানো হয়নি। এতে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। বাম আমলে রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা যেত। এখন হেঁটেও যাতায়াত করা যায় না। রাস্তার দুধারে গর্ত। গ্রামের ভিতর সব রাস্তা ভালো নেই। এদিন যখন সভায় আসছিলাম তখন গ্রামের এক যুবক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন রাস্তায় কি মাছ চাষ করবেন? আমি উত্তর দিতে পারিনি”। অনুব্রতর প্রশ্ন তাহলে কিছু উন্নয়ন হয়নি তো? বামফ্রন্টের ৩৪ বছরে ভালো ছিল? গণেশবাবুর উত্তর, “এর থেকে ভালো ছিল”। এরপরেই অনুব্রত বলেন, “এতো উনয়ন তাতেও আপনার পেট ভরবে না”? উত্তরে গণেশবাবু বলেন, “কি এমন পেলাম যে পেট ভরবে! মানুষ চায় রাস্তা, পানীয় জল, বিদ্যুতের খুঁটিতে আলো। কিন্তু সেগুলো হয়নি”। এভাবেই চোখে চোখ রেখে অনুব্রতর প্রশ্নের জবাব দিলেন বুথ সভাপতি। এমনকি তার জবাবে সমর্থন জানিয়ে হাততালি দেন উপস্থিত কর্মীরা। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে অনুব্রত মণ্ডল অঞ্চল সভাপতিকে নির্দেশ দেন, উনি ভোট করতে পারবেন না। ওকে বুথ কমিটি থেকে সরিয়ে দাও। এই নির্দেশের পরেই কর্মীরা হই হই করে সভাস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। সভার বাইরে অনুন্নয়ন নিয়ে চিৎকার শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে জেলা পরিষদের মেন্টর অভিজিৎ সিংহ মঞ্চ থেকে নেমে সকলকে জোর হাত করে সভায় ঢুকতে অনুরোধ করেন। বেশ কিছুক্ষণ পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তবে এনিয়ে অনুব্রত মণ্ডল কিছু বলতে চাননি।
এনিয়ে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী বলেন, “মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে। এটাই ওই দলের পক্ষে অশনিসংকেত। এবার সর্বত্র মানুষ অনুন্নয়নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠবে। এটাই শুরু”।
বিজেপির সিউড়ি ২ নম্বর ব্লকের মণ্ডল সভাপতি অমিয় কুমার মণ্ডল বলেন, “উন্নয়ন কি হয়েছে তা মানুষই বলবে। মানুষ এবার বলতে শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি এই সরকারের অনুন্নয়নের জবাব মানুষই দেবেন”।

