আমাদের ভারত, ২৪ জুন: রাজ্যের স্কুলগুলির লাইব্রেরিতে এবার জায়গা করে নিতে চলেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই। রাজ্যে ২৩টি জেলাকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করে পাঠানো হয়েছে বইয়ের তালিকা। আর তাতে যা উল্লেখ রয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মা কথাঞ্জলি সহ একাধিক বই। আর এই বিষয়টি ঘিরে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে শিক্ষা মহলে।
রাজ্য শিক্ষা দপ্তর যে পাঁচটি সেটে বইয়ের তালিকা পাঠিয়েছে প্রত্যেকটিতেই রয়েছে ৫০০টির বেশি বইয়ের নাম। সেই বইগুলির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একাধিক বইয়ের নাম রয়েছে। এই তালিকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে স্কুল পরিদর্শকদের কাছে। তাদের মাধ্যমেই স্কুলগুলি বই কিনবে। স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তালিকা অনুযায়ী বই কিনতে হবে।
ইতিমধ্যে স্কুল গ্রন্থাগারের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের তরফে ২০২৬টি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলকে মোট ২০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি স্কুল পেয়েছে এক লক্ষ টাকা করে। সেই টাকাতেই কিনতে হবে তালিকা ভুক্ত বই। আর তালিকায় রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা একাধিক বই।
বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, ৫০০- এর বেশি বইয়ের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে ৯০টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা বই রয়েছে। জেলাভিত্তিক তালিকা অনুযায়ী প্রথম সেট যাবে উত্তরবঙ্গের আট জেলায়, দ্বিতীয় সেট যাবে পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলায়, একইভাবে তৃতীয় সেট দক্ষিণ দিনাজপুর সহ তিন জেলা, চতুর্থ সেট কলকাতা সহ ৫ জেলা এবং পঞ্চম সেট রাজ্যের আরও তিন জেলায় পৌঁছাবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা মহলে। একটা বড় অংশের শিক্ষকদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী লেখিকা হতেই পারেন, কিন্তু সরকারি খরচে সরকারি স্কুলে, লাইব্রেরিতে তার লেখা বই কেন বাধ্যতামূলক করা হলো এটা স্পষ্ট নয়। কোনো শিক্ষক- শিক্ষিকার আবার প্রশ্ন, এভাবে কি লেখকের নাম বাছাই করা যায়?
শিক্ষা অনুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, রাজ্যের স্কুলগুলির গ্রন্থাগারের জন্য অর্থ অনুদানের পাশাপাশি, ৫১৫টি বই গ্রন্থাগারে রাখার শর্ত দিয়েছে রাজ্য সরকার। তার মধ্যে ৯০টির কাছাকাছি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা বই। আমরা এই নজিরবিহীন নির্দেশের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে এই শর্ত তুলে নিতে হবে।
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বই রাখা নিয়ে অসুবিধা কোথায়? রাজনীতির পাশাপাশি কেউ সাহিত্যচর্চা করতেই পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর বই অনেক বেশি বিক্রি হয়, অর্থাৎ পাঠকের চাহিদাও রয়েছে। পাঠক ঠিক করবে কার বই রাখা হবে, কার রাখা হবে না। তার বই রাখা নিয়ে অসুবিধা হওয়া কাম্য নয়।
এদিকে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মন্ডল বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের রাজ্যের কোনো মুখ্যমন্ত্রী তো দূরের কথা, ভারতের কোনো রাজ্যে এই দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না। ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এভাবে স্কুলগুলোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার।
যদিও এবিষয়ে সরকারের তরফে এখনো কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।