ড. রাজলক্ষ্মী বসু
আমাদের ভারত, ২৯ এপ্রিল: কেষ্টাদার সেই কথাটা খেয়াল আছে? পুলিশ কে বোমা না গুলি কি যেন মারার কথা বলেছিলেন। পুলিশ মার খাচ্ছে। একি লেখার ভুল নাকি? না সবটাই ঠিক। এই লকডাউন উপলক্ষে পুলিশ যেন একটু বাড়তি জুজু সবার চোখে। পুলিশও দাদাগিরি দেখাচ্ছে কিন্তু তা এই মুহূর্তে আমাদের ভালোর জন্যই। তাদের ছুটি বাতিল, বিশ্রাম কম। বাকিটা কাজ। লকডাউন এবং বাকি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া নিঃসন্দেহে করোনার সাথে সামনে থেকে লড়াই। কিন্তু মানুষ যে অবাধ্য, বেআক্কেলে। ফুলের বাজার খোলার সিদ্ধান্ত যখন হয় তখন পুলিশ কোথায় ছিল? হাওড়া বাজার লোকে লোকারন্য। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে, হয়েছে ক্যামেরা বন্দী।
তবে এই লকডাউন সময় পুলিশের জন্য সত্যিই সুখের নয়। বাড়তি যন্ত্রণা- গণধোলাই। ওদের লাথি।
ঘটনা এক.
এপ্রিল মাসের শুরু, উত্তরদিনাজপুরের ইসলামপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্টেশন রোডের মায়া সিনেমা অঞ্চলে মানুষের ভিড় আর জমায়েত। পুলিশের কপালে ছোটে ইট পাটকেল লাঠি লাথি। শেষমেশ র্যাপিড অ্যাকশান ফোর্স মাঠে নামে।
ঘটনা দুই.
এই তো ২২ এপ্রিল, বারাসাতের ঘটনা। বাদুড়িয়া অঞ্চলের মানুষ ত্রাণ না পাওয়ায় পথে নামে। বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ পুলিশ সামাল দিতে গেলে বিনিময়ে মেলে জনতার বেদম মার। তারাগুনিয়া দাস পাড়া অঞ্চলের মানুষ থানার ওসি বাপ্পা মিত্রকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। অরাজকতার মাঝে এযেন আরো এক পাথর।
ঘটনা তিন.
এপ্রিলের শুরু, ভাঙ্গরের লেদার কমপ্লেক্স থানার কুলবেড়িয়া অঞ্চলে কিছু মত্ত যুবক লকডাউন আমান্য করে জমায়েত করে। মেদিনীপুরের গোয়ালতোড় মহারাজপুরেও একই ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গাই এমন দৃশ্যের সাক্ষী। লকডাউনে মাতালের রসদ কে যোগান দেয় তাও বড় জিজ্ঞাসা। পুলিশ ভূমিকা নিয়ে প্রথমেই এই জিজ্ঞাসা রইল। সে যাই হোক, দু ক্ষেত্রেই পুলিশ বাধা দিতে গেলে উল্টে তারা মার খায়। আহত হয়।
ঘটনা চার.
আগের ঘটনা ততো তোলপাড় না হলেও এই ঘটনা বেশ চমকে দেয়। হাওড়া জেলার টিকিয়াপাড়ার বেলিলিয়া রোডকে কনটাইনমেন্ট জোন হিসেবে চিহ্নিত করার পরও ঐ অঞ্চলে তোয়াক্কা না করে দোকান বাজারে মানুষের ভিড় বহাল থাকে। যদিও অভিযোগ যে র্যাপিড অ্যাকশান ফোর্স মহিলাদের উপর লাঠি চালালেই উত্তেজিত জনতার সঙ্গে পুলিশের যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসা এই, রাতারাতি কেন হাওড়ার পুরকমিশনার বিজিন কৃষ্ণকে দায়িত্ব থেকে সরানো হল?
লকডাউনের সময়সীমা যতো এগোচ্ছে মানুষের ধৈর্য তত কমছে। অথচ বেষ্টনী ততো কঠিন করা হচ্ছে। এখন করোনা থাবার জোর বুঝে জেলা চিহ্নিত। কনটাইনমেন্ট জোন চিহ্নিত। পুলিশের সেই রূপ আর আশা করা ভুল- করোনায় না বেরোনোর জন্য গান গাইছেন, সচেতন করার জন্য গোলাপ আর মাক্স দিচ্ছেন। এখন আর সে সময় নেই। নিয়মানুবর্তিতার পুলিশ দেখতেও এ রাজ্যের বহু মানুষ অভ্যস্ত নন। একে লকডাউন তার উপর অন্য রূপে পুলিশ- ওদের কিছু মানুষ সহ্যই করতে পারছে না।