আমাদের ভারত, ১১ জুলাই: বইমহলের হৃদয়ের কথা– একটা স্বপ্নের গল্প বলতে চান পার্থ সাহা। পেশায় বাংলার শিক্ষক। তাঁর আর্জি, “বই–ই পারে মনের দরজা খুলতে, বই পারে সুখ-দুঃখের প্রকৃত বন্ধু হতে। পথ তৈরি করতে আশা করি আমার হাত ধরবেন। প্রতিষ্ঠানটি আমার, আপনার সক্কলের।
চার তলা ভবনে বই আর বই। থাকছে বাংলা সাহিত্যের বিপুল সম্ভার। বই পড়া যখন আস্তে আস্তে অনেকে ভুলে যেতে বসেছে।
উত্তরবঙ্গ বরাবর বাংলা সাহিত্যের উর্বর ভূমি। শুধু তাই নয় বাংলা সাহিত্যের, বাঙালি সংস্কৃতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে উত্তরবঙ্গের ভূগোল, ইতিহাস, প্রকৃতি, সমাজ, সংস্কৃতি, মানুষ। এ কথা জানিয়ে পার্থবাবু বলেন, “এযাবৎ উত্তরবঙ্গে কোনও বইপাড়া প্রায় গড়ে ওঠেনি? এই প্রশ্নের উত্তর বিবিধ— কেউ বলবেন দূরত্ব, কেউ বলবেন বিক্রি নেই, কেউ বলবেন চর্চা নেই, কেউ বলবেন দক্ষিণে তাকিয়ে থাকা আমাদের নিয়তি, কেউ ভাববেন উদ্যোগ কেন নেব!
‘বইমহল’ এইসব অন্তরায়গুলোতে ফোকাস না করে ফোকাস রাখছে মূল জায়গায়। সব বাধা সরিয়ে একটু লাভ-ক্ষতি মেনে নিয়ে পথ চলাতেই তার আনন্দ। আকারে ছোট্ট হলেও একটা পথ তৈরির চেষ্টা কেবল। প্রযুক্তির গোলকধাঁধায় যখন শিশুমন পথ হারায়, তখন বইয়ের জগতে নিয়ে গিয়ে উত্তরণের পথ আমরাই দেখাতে পারি। বিশ্বাস এই একদিন উপসড়ক গিয়ে মিশবে মূল সড়কে।
উত্তরের সাহিত্য চর্চায় যাঁরা অগ্রণী তাঁদের ‘বইমহল অনন্য সম্মান’ দেওয়া হবে। ২০২২-এ এই স্বীকৃতি পাচ্ছেন সাহিত্যিক অর্ণব সেন। বছরে তিনজন ছাত্রের বইয়ের দায়িত্ব নেওয়া হবে। ভাবনাটির নাম ‘আসো হাত ধরি’। দুঃস্থ ছাত্রদের জন্য হচ্ছে ফ্রি লাইব্রেরি। থাকছে বসে পড়ার সুযোগ- বইঘরে বই পড়ুন।
আলিপুরদুয়ার ফ্লাইওভারের পাশে কোর্টপাড়ায় চারতলা বইয়ের মল ‘বইমহল’-এ সন্তানদের নিয়ে যান, নতুন বইয়ের গন্ধ নিতে দিন। ওদের চোখ জুড়াতে দিন। ওখানে গেলে কিনতেই হবে তা নয়। কেবল ওদের মধ্যে বই-সংস্কৃতি সঞ্চার করুন। দেখবেন ওদের মনের পরিধির বিস্তার ঘটবে। স্কুলের বই ছাড়া সন্তানদের কটা বই তুলে দেই? বা সন্তানের বন্ধুর জন্মদিনে বই উপহার দেই? বা আমরা নিজেরা কতটা সময় সন্তানদের দেখিয়ে বা মনের আনন্দে তাদের সামনে বই পড়ি? প্রশ্ন করবেন নিজেকে দেখবেন চোখ নেমে গেছে…আসলে দায়টা আমাদেরই। বইমহল ২০১৮ সালে ছোট্ট আকারে জন্ম নেয়। এখন পল্লবিত বৃক্ষ।“