আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১১ ফেব্রুয়ারি :
ময়না থানার আনন্দপুর গ্রামের জানা পরিবার নজির গড়লেন। মেয়ের বিয়েতে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। ভাবনা অনেক আগে থেকে। বিয়ের কার্ডে অনুষ্ঠান সূচির পাশাপাশি রক্তদান শিবির আয়োজনের কথাও উল্লেখ করেন তাঁরা। সেইমত সব ব্যবস্থা করা ছিল। জানা পরিবারের রক্তদানের আহ্বানে এগিয়ে আসেন অনেকে।
সোমবার বিকেলে একদিকে যখন পাত্রী তনুশ্রীর বিয়ের তোড়জোড় চলছে, অন্যদিকে তখন বাড়িতেই বাঁধা মণ্ডপে রক্তদান শিবিরের আয়োজন। পরিবারের সদস্য, আত্মীয় পরিজন, আমন্ত্রিত বন্ধুবান্ধব থেকে পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্তদানে এগিয়ে আসেন। মোট ৩০ জন এই শিবিরে রক্তদান করেন। রক্ত সংগ্রহের জন্য উপস্থিত ছিলেন তমলুক হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। পরিবারের মেয়ের বিয়েতে বাড়িতে রক্তদান শিবির আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। সমাজসেবামূলক কাজের প্রতি উৎসাহ থাকায় এই উদ্যোগে উৎসাহ কম ছিল না পাত্রী পেশায় নার্স তনুশ্রীরও। তবে বিয়ের দিনেই বাড়িতে এই শিবির আয়োজন করতে বাড়তি উদ্যোগী হন পাত্রীর কাকা রাসবিহারী জানা। তিনি জানান, আমাদের উদ্যোগে গ্রামবাসীরা ভীষণ ভাবে সহযোগিতা করেছেন। মেয়ের বিয়ের দিনই এই রকম একটা শিবিরের আয়োজন করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। দিন কয়েক ধরে চিন্তাভাবনা ছিলই। এরপর বিয়ের কার্ডে অনুষ্ঠান সূচির পাশাপাশি স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরের কথা উল্লেখ করে জানা পরিবার। তাঁদের এই উদ্যোগে খুশি পাড়া-প্রতিবেশীরা।
তনুশ্রী জানান, মুমূর্ষু রোগীর কাছে এক বোতল রক্তের প্রয়োজনীয়তা কতখানি, তা আমি ভালোই বুঝি। মানুষের সেবার মতো বড় কাজ আর কিছু হয় না। এক বোতল রক্ত একজন মুমূর্ষু রোগীর প্রাণ রক্ষা করতে পারে। সামাজিক অনুষ্ঠানে অন্য নানা সেবা মূলক কাজের আয়োজন করা হলেও রক্তদান শিবিরের উদ্যোগ তেমন একটা চোখে পড়ে না। পারিবারিক উৎসব অনুষ্ঠানেও মানুষ এ ধরনের উদ্যোগ নিলে অনেক রোগীর প্রাণরক্ষা হবে। আনন্দপুর গ্রামে এদিন সকাল থেকেই এই শিবিরকে সফল করতে জানা পরিবারের পাশে দাঁড়ান গ্রামবাসী থেকে শুরু করে স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। বিয়ের অনুষ্ঠানের মণ্ডপে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে স্বেচ্ছায় রক্তদান। পাশে তখন পাত্রী তনুশ্রীর গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে অন্যান্য আচার অনুষ্ঠানের ব্যস্ততা তুঙ্গে।
তনুশ্রীর বর অভিজিৎ জানান, মানুষের জন্য এমন উদ্যোগ হচ্ছে জেনে খুব ভালো লাগছে। রক্তদানের পাশাপাশি এদিন রক্তদাতাদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় একটি করে গাছের চারা। সব মিলিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান যে একটা মাত্রা পেয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।