পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ১২ অক্টোবর: কোলাঘাট ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক এলাকা থেকে বর্ষার জমা দূষিত জল দ্রুত বের করা সহ আগামী বর্ষার আগে সোয়াদিঘি খাল পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবিতে আজ জলবন্দি এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষজন ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায়। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। অবশেষে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বিডিও অমিত কুমার গায়েন অবরোধস্থলে উপস্থিত হয়ে আগামীকালের মধ্যে মহকুমা শাসক, কোলাঘাট ব্লকের বিডিও, সেচ দপ্তরের এসডিও’কে নিয়ে বৈঠক করে জমা জল দ্রুত বের করার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এরমধ্যে তমলুক থানার এক পুলিশ অতর্কিতে অবরোধকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। তারপরেই জনসাধারণ রুখে দাঁড়ায়। পরে অবশ্য ওই পুলিশ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। লাঠিচার্জে আহত হয় জন্মেজয় মান্না নামে এক অবরোধকারী। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতির সম্পাদক মধুসূদন বেরা, অশোক মাইতি ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক প্রমুখ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তমলুক মহকুমার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিকাশী খাল হোল-সোয়াদিঘি খাল। ২২ কিমি দীর্ঘ এই খালটি কোলাঘাট ব্লকের নারায়ণ পাকুড়িয়া থেকে বেরিয়ে ভোগপুর ও দেড়িয়াচক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা হয়ে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের সোয়াদিঘিতে পড়েছে। খালটি দিয়ে প্রায় শতাধিক মৌজার নিকাশী জল রূপনারায়ণে বের হয়। খালটি যেখানে রূপনারায়ণে পড়েছে। বছর কয়েক আগে সেখানে নদীর ভেতরে বেআইনি মাছের ঝিল তৈরী হয়েছে। এহেন গুরুত্বপূর্ণ খালটি দীর্ঘদিন পূর্ণ সংস্কার না হওয়ায় সাম্প্রতিক নিম্নচাপজনিত বর্ষণে পাঁশকুড়া স্টেশন বাজার সহ কোলাঘাট ব্লকের দেড়িয়াচক, ভোগপুর, সাগরবাড় এবং শহিদ মাতঙ্গিনি ব্লকের বল্লুক-১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। ফলস্বরূপ এলাকার আমনধান, ফুল, পান বরোজ, সবজি চাষ, মাছ চাষ ভীষণ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে ওই জমা জল দূষিত হয়ে গ্রামগুলিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে খালের নিম্নাংশে জল নিকাশীতে বাধা সৃষ্টিকারী আবর্জনা ও জঞ্জাল, বনসৃজনের পড়ে থাকা গাছ সহ মজে যাওয়া অংশে খানিকটা মাটি জেসিবি মেসিন দিয়ে খনন বা পরিষ্কার করলে জমা জল খানিকটা দ্রুততার সাথে বেরতো। এ ব্যাপারে গত ৬ অক্টোবর পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে জেলা মহকুমা প্রশাসন ও সেচ দপ্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে ডেপুটেশন দিয়ে জানানো হয়েছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইরিগেশন এসডিও জানান, অর্থ সঙ্কটের অজুহাতে করা যাচ্ছে না।
সোয়াদিঘি খাল সংস্কার সমিতির সম্পাদক মধুসূদন বেরা বলেন, এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই জলবন্দি এলাকায় জমে থাকা দূষিত জল দ্রুত নিষ্কাশন সহ আগামী বর্ষার আগে খালটি পূর্ণ সংস্কারের দাবিতে আজ ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলাম। ব্লক প্রশাসন আগামীকালের মধ্যেই জলনিকাশিতে বাধা সৃষ্টিকারী অংশগুলি পরিষ্কার না করলে সমিতি ফের অবরোধ সহ বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।