আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্তদের দেখতে এসে তৃণমূলের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। এলাকার তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা মন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে দেখায় কালো পতাকা, দেওয়া হয় গো ব্যাক শ্লোগান। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা ঘটনার প্রতিবাদ করলে শুক্রবার দুপুরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দক্ষিণ ২৪ পরগণার গোসাবার লাহিড়ীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের দয়াপুর জেটিঘাট ও বাজার এলাকা। বিশাল পুলিশ বাহিনীর দীর্ঘক্ষণের প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
শুক্রবার সকাল সাড়ে নটা নাগাদ কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী এসে পৌঁছন গদখালিতে। সেখান থেকে লঞ্চে চেপে রওনা দেন গোসাবা ব্লকের দয়াপুরের উদ্দেশ্যে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এলাকায় আসার খবর পেয়েই দয়াপুর জেটিঘাটে কালো পতাকা ও গো ব্যাক প্ল্যাকার্ড নিয়ে হাজির হয়ে যান কয়েকশো তৃণমূল কর্মী। অন্যদিকে মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ঐ ঘাটে উপস্থিত হন বিজেপি কর্মীরা। তারা তৃণমূলের এই বিক্ষোভ কর্মসূচির প্রতিবাদ করেন। তখনই একপ্রস্থ দুইপক্ষের মধ্যেই সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দু’পক্ষের অন্তত দশজন আহত হয়। বিজেপির দলীয় কার্যালয় ভাঙ্গচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ দুপক্ষকে সাময়িক সামাল দিলেও তৃণমূল কর্মীরা কালো পতাকা ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে ফের দাঁড়িয়ে পড়ে দয়াপুর জেটিঘাটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর লঞ্চ সেই ঘাটে এসে পৌছলে সেখানে মন্ত্রীকে নামতে বাধা দেন তৃণমূল কর্মীরা। দেওয়া হয় গো ব্যাক শ্লোগান। দেখানো হয় কালো পতাকা। বেশ কিছুক্ষণ লঞ্চে আটকে থাকার পর কার্যত জোর করেই দয়াপুরে নামতে যান দেবশ্রী দেবী। আর তখনই আবারও বিজেপি কর্মীদের সাথে তৃণমূল কর্মীদের ধ্বস্তাধস্তি বেধে যায় পুলিশের সামনেই। বেশ কয়েকজন তৃণমূল ও বিজেপি কর্মী ধস্তাধস্তির ফলে জেটি থেকে পড়ে যান নদীতে। আহত হন বেশ কয়েকজন। দীর্ঘক্ষণ ধরে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা কালো পতাকা ও গো ব্যাক প্ল্যাকার্ড নিয়ে জেটি ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকলেও কেন পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের সেখান থেকে সরানোর কোনও ব্যবস্থা করেনি তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
দয়াপুর জেটিতে নামার আগে লঞ্চ থেকেই অবশ্য মন্ত্রী বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি আপনাদের সাহায্যের জন্য এসেছি। আপনাদের বিধ্বস্ত এলাকা ক্ষতিয়ে দেখে কেন্দ্র থেকে সাহায্য পাঠানোর ব্যবস্থা করবো”। কিন্তু মন্ত্রীর এই কথায় কান দেননি বিক্ষোভকারীরা। উল্টে মন্ত্রীকে অশালীন কথা এমনকি পায়ের চপ্পল খুলেও দেখানো হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ থেকেও যখন এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, তখন বিজেপি কর্মীরা বাধ্য হয়েই তৃণমূল কর্মীদের ঠেলে জেটিতে নামেন।
এলাকার তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদের সদস্য অনিমেষ মণ্ডল দাবি করেছেন, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এদিন দুর্গতদের দেখতে নয়, এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। আর তাতেই এলাকার দুর্গত মানুষ ক্ষেপে যায়। বিজেপি কর্মীরা আমাদের নেতৃত্ব ও বেশ কয়েকজন কর্মীকে বেধড়ক মারধর করে”।
শেষ পর্যন্ত এলাকা পরিদর্শন না করে ফিরে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। ফিরে যাওয়ার সময় সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, “ তৃণমূল এটা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করলো। কেন্দ্রীয় সাহায্য থেকে এলাকার সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করল। আজ আমায় এলাকায় যেতে দেওয়া হল না। কয়েকমাস বাদেই এই বিক্ষোভকারীরা তাদের ভুল বুঝতে পারবেন। এলাকার সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করে নোংরা খেলায় মাতল তৃণমূল”।