আমাদের ভারত, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ২১ নভেম্বর:
১০০ বিঘা জমির এক মেছো ভেড়ির দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল তৃণমূল ও বিজেপি। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মোট ১৬ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ ২৪ পরগণার মৈপীঠ কোস্টাল থানার অন্তর্গত ভুবনেশ্বরী এলাকায়। এই ঘটনায় একজনকে আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেফতার করেছে মৈপীঠ কোস্টাল থানার পুলিশ।
মাছের ভেড়ি কার দখলে থাকবে এই নিয়েই তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে বিজেপির ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয় এলাকায়। একে অপরের প্রতি হামলার অভিযোগ তোলে। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, তাদের ৯ জন কর্মী আহত হয়েছে। অপরদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয় ৭ জন বিজেপি কর্মী আহত হয়েছে। ২২ টি ঘর ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। এই গণ্ডগোল ঠেকাতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয় মৈপীঠ কোস্টাল থানার দুই পুলিশ কর্মীকেও। আহতদের স্থানীয় জয়নগর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে ঘটনার জেরে তল্লাশিতে একজনকে অস্ত্র সহ গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের নাম স্বপন ঘোষ। তার কাছ থেকে একটি বন্দুক ও এক রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে।
বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগণা(পূর্ব) জেলা সভাপতি সুনিপ দাস বলেন, “ গত দশ বছর ধরে পাট্টা জমিতে মাছের ভেড়িতে চাষ করছিলেন বিজেপি কর্মীরা। এদিন ভোর রাতে হামলা করা হয় আমাদের কর্মীদের উপর। ৭ জন বিজেপি কর্মী আক্রান্ত। ২২ টি বাড়ি ভাঙ্গচুর করে তৃণমূল। এলাকায় অশান্তি শুরু করেছে তৃণমূল। বিজেপি করার জন্যই এই আক্রমণ”।
যদিও কুলতলি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি গোপাল মাঝি বলেন, “মাছের ভেড়ির লিজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার পরও বিজেপি কর্মীরা জোর করে দখল করে রেখেছিল। তৃণমূলের কর্মীরা ঐ জমি লিজ নিয়েছে কিন্তু তাদেরকে ঐ জমিতে যেতে বাধা দিচ্ছে বিজেপি। নিজেদের লিজ নেওয়া ওই মাছের ভেড়িতে এদিন সকালে কাজ করতে গেলে পরিকল্পিত ভাবে টাঙ্গি, বল্লম, রড নিয়ে হামলা চালায় বিজেপি কর্মী তারাপদ কয়াল, ধনঞ্জয় কয়াল, গুরপদ কয়াল সহ অনেকে। ঘটনায় ৯ জন তৃণমূল কর্মী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন”।
পুলিশ সুত্রে খবর, মৈপীঠের হালদার ভেড়িতে ১০০ বিঘা জমিতে মাছের ভেড়ি আছে নিলিমা হালদারদের। এই মাছের ভেড়িতে চাষ করার জন্য ২০১৬ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি লিজ দেওয়া হয় তারাপদ কয়াল, গুরপদ কয়ালদের। তখন তারা তৃণমূলের কর্মী ছিলেন। সেই লিজের মেয়াদ ৩০ নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ছিল। কয়েকমাস আগে তারাপদ কয়াল, গুরপদ কয়ালরা বিজেপিতে যোগ দেয়। যদিও মাছের ভেড়ির মালিক নিলিমা হালদারের অভিযোগ, লিজ শেষ হয়ে যাবার পর বিজেপি কর্মী তারাপদ কয়াল, গুরপদ কয়ালরা জোর করে দখল করে রেখেছিল ভেড়ি। লিজের আড়াই লক্ষ টাকাও দিচ্ছিল না। এরপরে একমাস আগে এই মাছের ভেড়ির লিজ তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী মহিম মন্ডল, সুব্রত প্রামানিক, দীপক প্রধানদের দেওয়া হয়। তাই এদিন সকালে নিজেদের লিজ নেওয়া মাছের ভেড়িতে কাজ করতে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা। তখন বিজেপি কর্মীদের ভেড়ি থেকে সরে যেতে বললে তারা হামলা চালায় তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের উপর।
যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে পাট্টা হোল্ডার সনাতন কয়াল, চন্দন সিংহ বলেন, “আমরা ৯ বছর ধরে চাষ করছিলাম। এদিন ভোরবেলা তৃণমূলের মহিম মন্ডল, সাত্যকি মন্ডল, সুকদেব মন্ডল সহ অন্যরা আমাদের উপর আক্রমন করে। বাড়ি ভাঙ্গচুর করে। লুঠপাঠ চালায়। আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের উপর আক্রমন চালানো হয়। আমাদের দুই মহিলা সহ ৭ জন আহত হয়”।
এ বিষয়ে উভয়পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ দুই পক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।