স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ২১ সেপ্টেম্বর: কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের অভিযোগে চার্জশিটে নাম রয়েছে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের। তাই সোমবার রানাঘাট আদালতে আগাম জামিনের আবেদন জানালেন বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার। প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার বিধায়ক খুনের ঘটনায় রানাঘাট আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিআইডি। সেই চার্জশিটে নাম আছে রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের। সেই মামলায় এদিন হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে এসে রানাঘাট আদালতে জামিন নিশ্চিত করতে নিজেই এলেন সাংসদ জগন্নাথ সরকার।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের খুনের ঘটনায় সিআইডি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয় রানাঘাট কোর্টের এডিজির কাছে। ঐ চার্জশিটে রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের নাম রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০ বি ও ৩০২ ধারায় মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই খুনের ঘটনায় মুকুল রায়কেও সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছে।
যদিও জগন্নাথ সরকার তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে তাঁর দাবি। তিনি জানান, আইনের ওপর তাঁর ভরসা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নদিয়ার
হাঁসখালিতে সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে আততায়ীর গুলিতে আহত হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঐদিন সন্ধ্যেবেলায় ফুলবাড়ি এলাকায় একটা পূজামণ্ডপে তিনি গিয়েছিলেন। যেখানে অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় তার মাথায় গুলি করে খুন করা হয়েছে বলে দাবি প্রত্যক্ষদর্শীদের। বিধায়ক খুনে ব্যবহৃত বন্দুকটি পুলিশ উদ্ধার করে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান ছিল হ্যান্ড মেড রিভলবার থেকেই গুলি চালানো হয়েছিল। এরপর তদন্তে নেমে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে তখন রাজনৈতিক উত্তাপ ছিল চরমে। তারমধ্যে শাসক দলের বিধায়ককে প্রকাশ্যে খুনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। বিজেপির বিরুদ্ধে এই খুনের অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বিজেপির পাল্টা দাবি ছিল, বাংলাদেশে চোরাকারবারের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন বিধায়ক। এরপর ঘটনার তদন্ত ভার সিআইডির হাতে দেয় নবান্ন। সেই ঘটনায় তদন্তে নেমে রানাঘাট আদালতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দেয় সিআইডি। বিধায়ক খুনে বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার সহ বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের নামও উঠে আসে। এরপর রাজ্য সরকারের তরফ থেকে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় মৃত কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিতের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছিলেন সত্যজিৎকে যারা মারল তারা যেন ভুলে না যায় যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা প্রকৃত দোষী তাদের আইনানুগ বিচার হবে। এবং আমরা চাইব তাদের যেন কঠোরতম শাস্তি হয়। আমরা সকলে মিলে তার পরিবারের পাশে থাকবো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সহ ধর্মিণীর সাথে কথা বলেছিলেন এবং আশ্বাস দিয়েছিলেন দল তাদের পাশে থাকবে। আর আজ কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ খুনের চার্জশিটে নাম থাকায় আগাম জামিন নিতে এলেন রানাঘাটের বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার।