সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৭ অক্টোবর: কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকেটে জেতা হরকালী প্রতিহার তৃণমূলে যোগদানের খবরে খুশির হাওয়া বিজেপির অন্দরে। তার বিদায়ে খুশি হয়ে কর্মীরা মিষ্টি বিলি করে। যদিও সাধারণ মানুষ এই দলবদল খোলা মনে মেনে নিতে পারেননি।
“ওরে মিষ্টি বিলি কর রে মিষ্টি বিলি কর, “বিষ্ণুপুর লোকসভার বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ বৃহস্পতিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্গা মায়ের বিসর্জনের সাথে সাথেই বিজেপির একটা আপদ বিদায় হয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাঁকুড়ার কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালী প্রতিহারের তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে সৌমিত্র খাঁ এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
সৌমিত্রবাবুর কথায়, ২০১৪ সাল থেকে বিধায়ক হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। একে ওকে ধরে টিকিট পেয়েছিলেন। দল ওকে মনোনীত করায় আমি এবং গোটা বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার কর্মীরা তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলা করে ওকে জিতিয়েছিলাম। সেই হরকালী তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তিনি কটাক্ষ করে বলেন, ওর শেষবারের মত বিধায়ক হওয়া হয়ে গেল। সৌমিত্র খাঁর পাল্টা জবাব দিয়েছেন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অলক মুখার্জি। তিনি বলেন, কোনও সজ্জন ব্যক্তি বিজেপিতে থাকতে পারেন না। এনিয়ে ২ জন বিধায়ক বিজেপি ছাড়লেন। আরও কয়েক জন লাইনে আছেন। অলকবাবু বলেন, কিন্তু সৌমিত্রকে আমরা দলে নেব না।
এদিকে সৌমিত্র খাঁ মিষ্টি বিলি করার কথা বলতেই আজ সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামী সকাল থেকে মিষ্টি খাওয়ালেন পথ চলতি মানুষকে। বাজি ফাটিয়ে উৎসবের মেজাজে দলীয় কর্মীদের নিয়ে হরকালী বিসর্জন দিলেন বলে জানালেন। তিনি বলেন, এবার বিজেপিতে দীপাবলীর রোশনাই বেরোবে তৃণমূলকে পোড়াতে।
পেশায় শিক্ষক হরকালী প্রতিহার একদা বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ছিলেন। তিনি দিলীপ ঘোষের অনুগামী বলেই পরিচিত। দিলীপ ঘোষ রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন হরকালী জেলা সভাপতির পদ পেয়েছিলেন। অবশ্য তার সাংগঠনিক দক্ষতা সেভাবে প্রভাব ফেলতে না পারায় তাকে সরিয়ে দিলীপবাবুর আর এক অনুগামী সুজিত অগস্থিকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
রাজ্য রাজনীতিতে দিলীপ ঘোষ কিছুটা পিছিয়ে থাকায় সুজিত অগস্তিরও পদ যায়। এনিয়ে জেলার রাজনীতিতে চর্চা থেমে নেই। বর্তমানে বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছেন ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা। তিনিও হরকালীকে আপদ আখ্যা দিয়ে বলেন, উনি তৃণমূলের এজেন্ট হয়ে উঠেছিলেন। দলে থাকলে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিভীষণের ভূমিকা নিতেন। অর্থের লোভে তৃণমূলে গেছেন। ওখানে লাথি ঝাঁটা খেয়ে পড়ে থাকতে হবে। এখন বিষ্ণুপুর লোকসভা নিষ্কন্টক হলো বলে মন্তব্য করেন অমরনাথ শাখা। তিনি বলেন, হিম্মত থাকলে পদত্যাগ করে উপনির্বাচনে জিতে দেখান তো কত দম।
এবিষয়ে হরকালীর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
হরকালীকে দলে নেওয়ায় তৃণমূলের একাংশও অখুশি। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, দল ভারি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এতে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হবে বলে তাদের অভিমত।