আমাদের ভারত, ১৭ ডিসেম্বর: চলচ্চিত্রোৎসব নিয়ে বিজেপি নেতাদের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। পুরোদমে শুরু হয়েছে চাপান উতোর।
শনিবার দুপুরের পর পশ্চিমবঙ্গের সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইটারে লিখেছেন, “মমতা ব্যানার্জি নিজে হীনমন্যতায় ভুগছেন। সফল বাঙালিদের প্রতি তাঁর ঘৃণার ব্যাখ্যা কী? তিনি শুধু সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীকে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রোৎসব আমন্ত্রণ জানাননি, তা নয়। বরং বুম্বা দা নামে পরিচিত প্রতিভাবান প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জিকেও দ্বিতীয় সারিতে ঠেলে দিয়েছেন। অসম্মানজনক।“
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অমিতাভ বচ্চন বলেছেন, “এমনকী এখনও নাগরিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।“ এর আগে এই উক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ টুইটারে লিখেছেন, “তিনি (অমিতাভ) একেবারে মমতার মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হিংসার শিকার হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সিনিয়র বচ্চনকে ধন্যবাদ।”
অমিত মালব্য টুইটারে লিখেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে মঞ্চে কলকাতায় কথা বলার পর অমিতাভ বচ্চন এই মন্তব্য করেছেন। তাই কথাটা অনেকটাই ঋষিসুলভ। অমিতাভ বচ্চনের এটি অত্যাচারী শাসকের কাছে একটি আয়না ধরার মতো, যাঁর প্রহরায় ভারতে ভোটের পরে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হিংসার সাক্ষী ছিল। তিনি বাংলার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছেন…।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার টুইটারে লিখেছেন, “মিস্টার অমিতাভ বচ্চন একদম ঠিক বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে কোনও গণতন্ত্র এবং বাকস্বাধীনতা নেই। এ রাজ্য গত বছর নির্বাচনের পরে সবচেয়ে খারাপ হিংসার সাক্ষী। এটা বলতে সাহস লাগে, আমি তার পরিপূরক। দিদির উচিত আত্মদর্শন করা এবং বাংলাকে প্রতিটি ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেওয়া বন্ধ করা উচিত।“
অপর একটি টুইটে সুকান্তবাবু লিখেছেন, “অমিতাভ বচ্চন মহাশয়ের সাথে আমি একমত। পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক সুরক্ষা এবং বাকস্বাধীনতাই শুধু খর্ব হয় না, এখানে প্রকাশ্যে গণতন্ত্রের হত্যা হয়। এর প্রমাণ ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০২১ -র ভোট পরবর্তী হিংসা।“
অপর এক টুইটে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি লিখেছেন, “বাংলার চলচ্চিত্রশিল্প দীর্ঘ সময় ধরে রক্তাল্পতায় ধুঁকছে। শাসকদল প্রতিবছর উৎসবের নামে সরকারি কোষাগার থেকে কোটি-কোটি টাকা লুঠছে।। বিগত দশ বছরে বাংলা সিনেমার প্রকৃত উন্নয়নের খতিয়ান (শ্বেতপত্র) প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি।‘’
অমিত মালব্য অনুষ্ঠান মঞ্চের দুই অতিথি শাহরুখ খান এবং অরিজিৎ সিংহের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। চলচ্চিত্র উৎসবে বিজেপি নেতা তথা আর এক তারকা অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ না করার কথা উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য, ‘এ ভাবেই তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে বাদ দিয়ে শাহরুখকে বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাস্যাডর করেছেন। সফল বাঙালিদের তিনি (মমতা) সব সময়ে ছোট করেছেন।’ সেই সঙ্গেই নেতাজি ইন্ডোরের ওই মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে অরিজিতের ‘আয়না দেখানো গানটিও এই তরজায় হয়েছে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অমিতবাবু অন্য একটি টুইটে লিখেছেন, ‘অমিতাভ বচ্চন থেকে অরিজিৎ সিংহ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মঞ্চে দাঁড়িয়েই তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে বাংলার ভবিষ্যৎ গেরুয়া’।
প্রবীন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে চলচ্চিত্রোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না ডাকার প্রসঙ্গেও টুইট করেছেন সুকান্তবাবু। রাজ্য বিজেপি সভাপতি লিখেছেন, “মিঠুন চক্রবর্তী ছাড়া কেআইএফএফ অসম্পূর্ণ। অন্য রাজ্য থেকে সুপারস্টারদের ডেকে আপনার নিজের এড়িয়ে যাওয়ার অর্থ কী? শিল্পের ক্ষেত্রে রাজনীতিকে দূরে রাখতে হবে।“
মঞ্চে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে অমিত মালব্য মন্তব্য করেছেন। মালব্যকে বিঁধে পাল্টা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “সৌরভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে স্নেহ করেন। সৌরভ সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। সেই সৌরভকে যখন বিসিসিআই থেকে অপমানজনকভাবে সরিয়ে দিয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রী অমিত শাহর ছেলে রয়ে গেলেন, তখন আপনাদের সম্মানবোধ কোথায় ছিল?” কুণালের কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যথেষ্ট সম্মান পান সৌরভ। তাঁকে অপমান আপনারা করেছেন। ক্ষমা চান।”
চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে অমিতাভ বচ্চন বাক স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। মালব্যর দাবি, সে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে শোনাতেই বলেছেন। তির বিজেপির শীর্ষনেতৃত্বের দিকেই ঘুরিয়ে পাল্টা কুণাল বলেছেন, “অমিতাভ বচ্চন ঠিক বলেছেন। দেশে বাক স্বাধীনতা নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত করছে বিজেপি। তাঁর এই কথায় এখন গায়ে জ্বালা ধরছে?”
জবাব দিতে দেরি করেনি তৃণমূল। দলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “যারা নীতি-পুলিশ হয়ে দেশে সিনেমা নিষিদ্ধ করতে চায়, তাদের মুখে এ সব কথা শুনব! অমিতাভ বচ্চন যা বলেছেন তা উদার গণতন্ত্রের শর্ত। দেশের মানুষ জানে, তা কোথায়, কী ভাবে খর্ব হচ্ছে।”
কটাক্ষ করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। সৌরভকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দুবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যাঁদের বহিরাগত আখ্যা দিতেন, তাঁদের তিনি চলচ্চিত্র উৎসবে নিমন্ত্রণ করলেন।”
সৌরভ এবং অরিজিতের গান নিয়ে বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণ করে সুখেন্দুশেখরবাবু বলেন, “সৌরভকে নিয়ে কুমীরের কান্নার আগে বিজেপি নেতাদের বলতে হবে, কেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিকেটারকে বিসিসিআই থেকে বাদ দেওয়া হল? কেন আইসিসি-তে যাওয়া হল না তাঁর?” আর ‘গেরুয়া’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের জাতীয় পতাকায় উপরে থাকে এই রং ত্যাগ ও শৌর্যের প্রতীক। এ নিয়ে বিজেপি স্বপ্ন দেখলে তা জলে যাবে।”