জয় লাহা, দুর্গাপুর, ২৮ মার্চঃ- ‘অব্যবহৃত’ জমির ওপর বসবাসকারী নির্মীয়মান অবৈধ বাড়ি অন্যায়ভাবে ভাঙ্গচুরের অভিযোগ রাষ্ট্রায়ত্ত দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আর ওই অমানবিক আচরণের প্রতিবাদে এবার সরব হল বিজেপির উদ্বাস্তু সেল। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে ডিএসপির নগর প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপির উদ্বাস্তু সেল। ঘটনাকে ঘিরে বিস্তর জল্পনা ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাস ধরে দুর্গাপুর শিল্পশহরে জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সেইল এর দুর্গাপুর ইস্পাত (ডিএসপি) কর্তৃপক্ষ। গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুর পুরসভার ১ নং ওয়ার্ডের ধোবিঘাট ও বিজুপাড়া অঞ্চলে ১০-১২ টি নির্মিয়মান বাড়ি ভেঙ্গে দেয় ডিএসপি। তাতেই চরম অসহায় অবস্থায় পড়ে ওইসব পরিবারগুলি। একইসঙ্গে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে গোটা এলাকাবাসী। তার প্রতিবাদে সরব হয় দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন বস্তি কল্যাণ সমিতি। তাদের দাবি, ওই অঞ্চলে ধোবিঘাট, মধুপল্লী, রঘুনাথপুর, বিজুপাড়া এলাকায় প্রায় ৪ হাজার পরিবার বিগত ৬০-৭০ বছর ধরে বসবাস করছে। গত কয়েকবছর ধরে এলাকায় পাট্টার দাবিতে আন্দোলনও জারি রয়েছে। আন্দোলনের মাঝে বসত জমির স্থায়ীকরনের বদলে আচমকা বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙ্গচুরের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ঘটনায় বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে।

বাসিন্দাদের দাবি,”ধোবিঘাট, রঘুনাথপুর, বিজুপাড়া মৌজার ও অঞ্চলের বসত জায়গাগুলি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাসিন্দাদের অন্ধকারে রেখে, বেশিরভাগ জায়গা ১৯৯৫ সালে ডিএসপি মাত্র ৩১৫ টাকা বিঘা দরে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ক্রয় করেছেন। যা আমাদের কাছে অনৈতিক। এখানে রঘুনাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯৭৯ সালে সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত। যা প্রমাণ করে, জায়গাটি বসতিগত হিসাবে বহু পুরনো।”
বস্তিবাসীদের আন্দোলনে অক্সিজেন জুগিয়ে সরব হল বিজেপির উদ্বাস্তু সেল। মঙ্গলবার বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের পক্ষে উদ্বাস্তু ও ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে ডিএসপির নগর প্রশাসনিক ভবনের সামনে মিছিল করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। হাজির ছিলেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে। বিজেপির জেলা উদ্বাস্তু সেলের আহ্বায়ক কৃষ্ণ মাল। এদিন কৃষ্ণ মাল জানান,
“জমি অধিগ্রহনের পর এযাবাৎকাল কোনোরকম ব্যবহার করেনি ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। যদি ওই জমিটি তাদের ব্যবহার্যে প্রয়োজন, তাহলে সরকারি নিয়ম মেনে আগাম কোনরকম মাইকিং করে জানানো হল না কেন? ডিএসপি আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে এধরনের তালিবানি তান্ডব চালালো কেন?”
তিনি আরও বলেন, “ভেঙ্গে ফেলা বাড়িগুলি একদিনে তৈরী হয়নি। গত ১-২ বছর ধরে তৈরী হচ্ছিল। গত ১-২ বছরের মধ্যে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ ৩-৪ মাস আগেও কেন কোনোরকম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সতর্ক করেনি? ওই ওয়ার্ডে এমনও জমি রয়েছে, যা আরএস রেকর্ডে একবছর আগে ছিল বনাঞ্চল অর্থাৎ রাজ্য সরকারের জমি। বর্তমানে এলআর রেকর্ডে সেটি ডিএসপির নামে রেকর্ড হয়ে যায় কিভাবে?”
তিনি দাবি করে বলেন, “তাই আমারা মনে করি, আমাদের পাট্টা নিয়ে আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র করে দমানোর জন্য এধরনের বর্বোরচিত আক্রমন করা হল। সরকারের যখন লক্ষ্য, সাধারণ মানুষের মাথার ছাদ দেওয়া। তখন, আমাদের এলাকায় ডিএসপি কর্তৃপক্ষ কেন ১১-১২ টি পরিবারের বাড়ি ভেঙ্গে বেঘরে করে ভয় দেখানো হচ্ছে। অমানবিক ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ডাক মাধ্যমে আমাদের দাবি সমূহ স্মারকলিপি ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হবে। একইসঙ্গে ওই এলাকায় এভাবে উচ্ছেদের বদলে বসত জমির স্থায়ীকরনের দাবি জানাচ্ছি। না হলে আগামী দিনে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হবে।”
তবে শিল্পাঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপির এই আন্দোলনকে কটাক্ষ করেছে। যদিও এদিন বিক্ষোভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ডিএসপি কর্তৃপক্ষ।

