“মাওবাদীদের থেকেও ভয়ংকর বিজেপি” – পুরুলিয়ায় নজির বিহিন অভিযোগ মমতার

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৯ জানুয়ারি: বিজেপি মাওবাদীদের থেকেও ভয়ঙ্কর বলে অভিযোগ করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মঙ্গলবার, পুরুলিয়ার হুটমুড়ার জনসভা থেকে এই ভাবেই বিজেপিকে আক্রমণ করেন তিনি৷

অন্যান্য জায়গার মতোই পুরুলিয়াতে জনসভা করতে এসে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে এদিন তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে অস্ত্র শানান। বাদ যায়নি টলিউডও। এদিনও মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি সবাইকে নিয়ে এন আর সি-র বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে পুরনো মেজাজে ফিরে যান। মঞ্চ থেকেই দেন বেশ কিছু নতুন স্লোগান। সবে মিলে পুরুলিয়ায় খানিকটা ঝিমিয়ে পড়া দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে চেষ্টার কসুর করেননি নেত্রী। দলত্যাগীদের নাম না করে বারে বারে আক্রমণ করেন তিনি। নন্দীগ্রামের মতোই এখানেও দলত্যাগীদের লোভি, ভোগী বলে আক্রমণ করেন।

তবে পুরুলিয়ার মাটিতে দাঁড়িয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপিকে মাওবাদীদের থেকেও ভয়ঙ্কর বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, এই দল সব কিছু ধ্বংস করে দেবে। একথা বলার সাথে সাথে এদিন মুখ্যমন্ত্রী গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর উল্লেখও করেন। কলকাতার টলিউড জগতের এক অভিনেত্রীর নাম করে তিনি বলেন, শুধু নিজে স্বাধীন ভাবে কথা বলার জন্য ওই অভিনেত্রীকে ভয় দেখানো হচ্ছে। এই রাজ্যে এই সব চলবে না বলেও দাবি করেন তিনি। সরাসরি হুংকার দিয়ে তিনি বলেন, “ক্ষমতা থাকলে এখানকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষদের গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।”

এদিন কৃষি নীতি এবং এন আর সি নিয়েও কেন্দ্রের শাসক দলের ব্যাপক সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের সরকারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জঙ্গলমহল এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের দাবি করেন তিনি। এখানকার আদিবাসী এবং কুড়মীদের জন্য তার সরকারের প্রকল্পগুলির কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিনে দেশনায়ক দিবস পালন করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দিনটায় কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি রয়েছে তা হয়নি। তাই খুশি নন তিনি।

এদিন সভা চলাকালীনই মহিলা দর্শকদের আসন থেকে হঠাতই চিৎকার শুরু করেন কয়েকজন মহিলা। তারা নিজেদের সরকারী বিভিন্ন স্কিমের কর্মী জানিয়ে মাসিক বেতন এবং অবসরের বয়স ৬৫ বছর করার দাবি জানাতে থাকেন। এতে ব্যাপক চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন বিজেপির চক্রান্তে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এনিয়ে পাল্টা বিজেপি নেতাদের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তবে পরে খানিকটা নরম হয়ে মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবিপত্র মঞ্চে নিয়ে পড়েন। খুঁটিয়ে পড়ার পর দাবিগুলি বিবেচনা করার আশ্বাস দেন তিনি।

সভা শেষে কপ্টারে করেই পুরুলিয়া পুলিশ লাইনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। এদিন পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে রাত্রিবাস করার পর বুধবার কয়েকটি কার্যক্রম রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। উল্লেখযোগ্য ভাবে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ শতাব্দী রায়। অভিনেত্রীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার একান্তে কথা বলতে দেখা যায় মুখ্যমন্ত্রীকে। অনান্যদের মধ্যে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পুরুলিয়ার সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়, কো মেন্টার জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি গুরুপদ টুডু সহ বিশিষ্টরা ।

পুরুলিয়া জঙ্গলমহলের অংশ৷ বাম জমানায় এখানে মাওবাদী দাপট দেখা গিয়েছে৷ কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ করতে দেখা গিয়েছে। রাজ্য সরকার আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের চাকরির ব্যবস্থাও করেছে ৷ এদিন সেই কথাও উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়৷ মাওবাদীদের কীভাবে তাঁর সরকার মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছে, তা জানিয়েই এই ইস্যুতে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তখনই তিনি দাবি করেছেন, ‘‘মাওবাদীদের থেকে বিজেপি আরও ভয়ঙ্কর ৷’’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় যখন রক্ত ঝরছিল, তখন বিজেপি কোথায় ছিল?

২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পুরুলিয়া থেকে জয় পায়৷ এদিন সেই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে মমতার কথায় ৷ তাঁর দাবি, বিজেপি মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ভোট নিয়েছে৷ তার পর চলে গিয়েছে দিল্লিতে। পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ কাজ করে কি, জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্নও করতে দেখা যায় মমতাকে৷

পুরুলিয়া তথা গোটা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার কী কী করছে, সেই ব্যাখ্যাও এদিন দিয়েছেন৷ পাশাপাশি পুরুলিয়ার ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছেন। পুরুলিয়ায় প্রথম ভাষা আন্দোলন হয় সেই কথাও উল্লেখ করেন৷ তাঁর দাবি, পুরুলিয়া কোনওদিন বহিরাগতদের কাছে মাথা নত করেনি, আগামিদিনেও করবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *