পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপির চমক, কাঁকসায় পদ্ম প্রার্থী ৮৫ বছরের উমারানী

জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৮ জুন: বিজেপির অন্ধ ভক্ত। স্বামীও এক সময় সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ৮৫ বছর বয়সে পঞ্চায়েতে বিজেপি প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কাঁকসার আমলাজোড়ার উমারানী। এই বয়সে প্রার্থী হয়ে যেমন দলের যুব কর্মীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, তেমনই পঞ্চায়েত ভোটে নতুন চমক বিজেপির।  

নাম উমা রানী মিশ্র। বয়স ৮৫। বয়সের ভারে শ্রবনশক্তি কমেছে। পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসা ব্লকের আমলাজোড়া পঞ্চায়েতের ধোবাঘাট গ্রামের বাসিন্দা। দুই ছেলের মধ্যে বছর কয়েক আগে এক ছেলে মারা গেছেন। স্বামীরও মৃত্যু হয়েছে। অভাব অনটনের সংসার। বার্ধ্যকভাতা যেটুকু পান, তাতে কোনওভাবে সংসার চলে। স্বামী কুবীর মিশ্র বামফ্রন্টের দোর্দন্ড প্রতাপের সময় বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে বিজেপির অন্ধ ভক্ত উমা রানী। বছর কুড়ি আগে আমলাজোড়ার বিহারপুর গ্রাম থেকে বিজেপির হয়ে প্রথম প্রার্থী হয়েছিলেন। ৮৫ বছর বয়সেও সাহস ও ইচ্ছাশক্তি প্রবল এবং সক্রিয় বিজেপিকর্মী। নরেন্দ্র মোদীর অন্ধ ভক্ত। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব সেই উমাদেবীকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে। কাঁকসার আমলাজোড়া অঞ্চলের ২৭৬ নং গ্রাম সাংসদে বিজেপি প্রার্থী উমারানী মিশ্র।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ইতিমধ্যে প্রচারও শুরু করেছেন। এই বয়সে কেন প্রার্থী হয়েছেন? প্রশ্ন করতেই উমাদেবীর সপাটে জবাব, “স্বামী একনিষ্ঠ বিজেপি কর্মী ছিলেন। আমি বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীর অন্ধ ভক্ত। করোনা আবহের লকডাউনে বিনামুল্যে রেশন সামগ্রী দিয়েছে কেন্দ্র সরকার। উজ্জালা যোজনায় গ্যাস। প্রত্যেকের পাকা বাড়ি তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছে। আয়ুষ্মান কার্ড যেটা রাজ্যে চালু করতে দেয়নি তৃণমূল। তার জন্য আমাদের মত গরিব মানুষ চিকিৎসা করাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তাই নরেন্দ্র মোদীর অন্ধ ভক্ত। বিজেপিই একমাত্র গরিব মানুষের সাহারা। তাই এই বয়সে প্রার্থী হয়েছি।”

জেতার বিষয়ে উমাদেবী জানান, “আমাদের মত অসহায় বয়স্ক মানুষের জন্য কাজ করব। গ্রামের মানুষ খুব ভালোবাসে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে, মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে আমি অবশ্যই জিতব।”

প্রসঙ্গত, গত ২০১৯ সালের লোকসভা ও ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের নিরিখে আমলাজোড়া অঞ্চলের ধোবাঘাট গ্রামে বিজেপি অনেকটাই এগিয়ে। তাই স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বও উমাদেবীর জয়ের বিষয়ে অনেকটাই আশাবাদী। স্থানীয় বিজেপিকর্মী অসীম ঘড়ুই, প্রসেঞ্জিত বাগদী বলেন, “ঠাকুমা এবারে জিতবে। গ্রামের মানুষ তৃণমূলের অত্যাচর থেকে পরিত্রাণ চাইছে। দু হাত তুলে সমর্থন করছে বিজেপিকে।”

উল্লেখ্য, বিজেপির প্রত্যেক নির্বাচনে প্রার্থী পদে চমক রাখে। গত ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঁকুড়ার শালতোড়া আসন থেকে রাজমিস্ত্রির পরিবার থেকে চন্দনা বাউরীকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছিল। এছাড়াও আউশগ্রাম বিধানসভায় পরিচারিকা কলিতা মাজিকে প্রার্থী করে বড় চমক দিয়েছিল। চন্দনা বাউরী বিপুল ভোটে জয়ীও হয়েছেন। তবে কলিতা মাজি টক্কর দিয়ে কয়েক হাজার ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হয়েছেন।

বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘড়ুই বলেন, “উমারানী আমাদের গর্ব। বামফ্রন্টের দোর্দন্ড প্রতাপের সময়ও প্রার্থী হয়েছিলেন। এখন তৃণমূলের অত্যাচার থেকে গ্রামবাসীকে পরিত্রাণ দিতে প্রার্থী হয়েছেন। উমাদেবীর সাহসিকতা বিজেপির অনুপ্রেরণা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *