জয় লাহা, দুর্গাপুর, ১৮ মে: শহরে এসেছিলেন সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অবৈধ কয়লা পাচার থেকে গরু পাচারে মদত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আর তাই শহরকে কলুষিত হওয়ার থেকে শুদ্ধিকরণে নামল গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর সিটিসেন্টারে ঝাঁটা হাতে গোবর জল নিয়ে রাস্তা পরিস্কার করল বিজেপি। ঝাঁটা দেওয়ার পর গঙ্গাজলও ছড়িয়ে দেয় বিজেপি কর্মীরা। দুর্গাপুর পুরভোটের আগে সরগরম শিল্পাঞ্চলের রাজনীতির ময়দান।
প্রসঙ্গত, দরজায় কড়া নাড়ছে পঞ্চায়েত নির্বাচন।তার আগে রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্র সহ নানান দিকে আষ্টেপিষ্টে দুর্নীতিতে জড়িয়ে তৃণমূল। তার ওপর কয়লা, গরু পাচারে বিদ্ধ শাসক দলের একাধিক নেতা। আর এই ইস্যুকে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির। পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিকে ইস্যু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাম শিবির। তারওপর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার। দলীয় কর্মসূচিতে তা বারংবার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠনকে মজবুত রাখতে আসরে নেমেছে তৃণমূল সাংসদ তথা তৃণমূলে সেকেন্ড ইন্ কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় নব জোয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বাতানুকুল বিশেষ গাড়িতে চলছে তাঁর জেলা সফর। জেলা সফরের মধ্যেই কোথাও জনসভা, কোথাও শোভাযাত্রা, আবার কোথায় অধিবেশন করছেন। তার সঙ্গে এলাকায় নিশিযাপনও করছেন। আর এই কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। তার জন্য শিবির করে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন চলছে। গত মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুর চিত্রালয় মাঠে ছিল অধিবেশন। বুধবার বিকেলে লাউদোহায় ছিল জনসভা। এদিন জনসভা থেকে আগাগোড়া কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে
বৈমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি।
দুর্গাপুরের অধিবেশন থেকে তিনি বলেন, “বিজেপির ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে অর্থবল, মিডিয়ার অপপ্রচার, কুৎসা, এজেন্সি, আধাসামরিক বাহিনী, জবাব মানুষ দিয়েছে। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন দিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে।” তিনি জীতেন্দ্র তেওয়ারির নাম না করে বলেন, “বিজেপি বলে কয়লা চোর। সব থেকে বড় কয়লা চোর পান্ডবেশ্বরের প্রাক্তন বিধায়ক। মানুষ তাকে প্রাক্তন করেছে, আজীবন প্রাক্তন হয়ে থাকবে। হেরে যাওয়ার পর তৃণমূলে আসার জন্য ১০০ বার দরবার হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বাসঘাতকদের তৃণমূলের দরজা বন্ধ। বেনো জল বের করতেই নব জোয়ার নিয়ে এসেছি। আর এই নব জোয়ারে মানুষের ভিড়ে জন জোয়ারে পরিণত হয়েছে।” তিনি বলেন, “দিলীপ ঘোষ কয়লা মাফিয়া জয়েদব খাঁ’কে নিয়ে শিবের মাথায় জল ঢালছে। কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী, কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে হোটেলে ছবি তুলছে। রাজু ঝাঁ কোন দলে ছিল? লোকে চুরি করে জেলে যায়। বড় চোরেরা চুরি করে বিজেপিতে যায়।” তিনি বলেন, “বাংলায় ১৫১টা কেন্দ্রীয় টিম এসেছে। ২৪ মাসে ২৫ টা ইডি, সিবিআই মামলা করেছে। তবুও তৃণমূলকে দমানো যায়নি। গত ১৭ বছর ধরে সিবিআই নোবেল চুরির কিছু কিনারা করতে পারেনি। সারদার টাকা ফেরাতে পারেনি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২ কোটি মানুষকে ৩৭ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্মীর ভান্ডারে পাইয়ে দিয়েছে। আমাদের নেত্রী ৫০০ টাকা করে দিচ্ছে, আর দিল্লির জুমলাবাজদের সরকার আধার কার্ডের লিঙ্কের নামে হাজার টাকা করে নিয়ে যাচ্ছে। বিজেপি ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করে। আমরা কর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি করি। একদিকে দানব আর এদিকে মানব। অনাচার বনাম উন্নয়ন। তাই বিধানসভায় মানুষ বাংলার মেয়েকে নিয়ে এসেছে। তৃণমূল কথা দিয়ে কথা রাখে। আগামী নির্বাচনে মানুষের অধিকারের লড়াই। অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দেবেন।”
আর তার পাল্টা জবাব দিতে বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের সিটিসেন্টারে নামল বিজেপি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার শহরের পথে নেমে অভিনব প্রতিবাদে সরব হল স্থানীয় বিজেপি নেতা কর্মীরা।
এদিন যে রাস্তা দিয়ে দুর্গাপুরে এসেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই রাস্তা অর্থাৎ সিটিসেন্টারের দুর্গাপুর নগরনিগম সংলগ্ন জাতীয় সড়ক সংলগ্ন সার্ভিস রোড গঙ্গাজল ও ঝাঁটা দিয়ে পরিস্কার করেন বিজেপি কর্মীরা। যার নেতৃত্ব দেন বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘোড়ুই। বিজেপি বিধায়ক এদিন অভিষেক ব্যানার্জিকে পাল্টা তোপ দেগে বলেন, “বাংলার সবচেয়ে বড় চোরের পায়ের ধুলো পড়ে রাস্তা অপবিত্র হয়ে গিয়েছিল। আমরা আজ সেই রাস্তা গোবর, গঙ্গাজল দিয়ে ধুয়ে ঝাঁট দিয়ে শুদ্ধিকরণ করলাম। দুর্গাপুর শিক্ষিত, সংস্কৃতবান লোকেদের জায়গা। এখানে কয়লা চোর, গরু চোর, বালি চোরেদের কোনও স্থান নেই।”