মনোনীত সদস্যকে প্রধান না করায় বিজেপি নেতা কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি, অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি: মনোনীত সদস্যকে প্রধান না করায় বিজেপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা মৌতড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। দলীয় কর্মী সমর্থকদের দ্বারা নিগৃহীত হলেন এক বিজেপি পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ও নেতা। আদালতের নির্দেশে আজই ছিল বিজেপির বোর্ড গঠন। আর প্রধান, উপপ্রধান সহ বোর্ড গঠন হতেই উত্তেজনা বেড়ে দলেরই নেতা-কর্মীরা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন। অশান্তির পরিবেশে বিজয় উৎসব অধরাই থেকে গেল।

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা-মৌতড় গ্রাম পঞ্চায়েত বরাবরই নজরে রয়েছে জেলায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১২ আসন বিশিষ্ট এই গ্রাম পঞ্চায়েতে ৯টি পায় বিজেপি। ২টি আসন পায় তৃণমূল ও একটি আসনে সিপিএম জয়লাভ করেছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর যখন এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয় তখন ঝামেলা হয়। অভিযোগ উঠেছিল বহিরাগতরা ঢুকে পড়ে সভা ভন্ডুল করে দেওয়ার। তবুও তৃণমূলের এক সদস্যকে প্রধান নির্বাচিত করা হয়েছিল। প্রধানের পরিবর্তে প্রশাসক দিয়ে পঞ্চায়েত পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রশাসন। সেইমত প্রশাসক দিয়ে পঞ্চায়েতটি পরিচালনা হচ্ছিল। এরপরই আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। কিন্তু বিজেপির দায়ের করা আদালতের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রধান নির্বাচন করতে হবে। সেই মত আজ ছিল প্রধান গঠনের দিন। কিন্তু প্রধান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন বিজেপির কর্মী সমর্থকেরাই। এদিন প্রধান গঠনের জন্য বিজেপির ৯ জন সদস্য সভায় উপস্থিত ছিলেন। তৃণমূলের দুই সদস্য ও সিপিএমের এক সদস্য এদিনের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন।

এদিন সভাকক্ষ থেকে সদস্যরা বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জানান, বিজেপির রুকনি গ্রামের বাসিন্দা বলরাম ধীবর প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। বাঁন্দা গ্রামের বাসিন্দা মুক্তা বাউরি উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এরপরই দলের কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এমনকি হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে দলের নেতা ও কর্মী নিজেরাই। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির সদস্য কালীচরণ বাউরি দলেরই কর্মী ও সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। তাঁর গেঞ্জি ছিঁড়ে ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয়।

আজকের বোর্ড গঠন নিয়ে অসতুষ্ট ও ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা জানান, “দলীয় ভাবে মঙ্গলদা এক নম্বর বুথ থেকে জয়ী বিজেপি সদস্য বনডাঙ্গার বাসিন্দা দীনেশ মুর্মুকে প্রধান নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবুও তা কেন আজ কার্যকর হল না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন দলেরই কর্মী ও সমর্থকরা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য কালীচরণ বাউরি সহ আরো কয়েকজন নেতা কর্মীর উপর চড়াও হয়ে তাঁকে এবং তাঁর অনুগামীদের নিগৃহীত করেন। তবে, এদিন প্রশাসনিকভাবে জানানো হয়, মঙ্গলদা-মৌতড় গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির প্রধান, উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছে।

আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এদিন এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করার পর বিজেপির বিজয় উৎসব পালন করার কথা ছিল। সেইমত গেরুয়া আবির, সাউন্ড বক্স সবই আনা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান নির্বাচন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে না হওয়ার কারণে কর্মী ও সমর্থকরা নিজেরাই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন। এই ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে ফেলে দেয় বিজেপিকে। পঞ্চায়েতটি পাড়া বিধানসভার অন্তর্গত। আর তার দলীয়ভাবে দায়িত্বে রয়েছেন বিজেপি জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী। ঘটনার কথা স্বীকার করে দলীয় ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *